logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৩৮
তিস্তার পানিতে তলিয়েছে ফসল, দুশ্চিন্তায় চরাচঞ্চলবাসী
জে আই সমাপ্ত, লালমনিরহাট

তিস্তার পানিতে তলিয়েছে ফসল, দুশ্চিন্তায় চরাচঞ্চলবাসী

অসময়ে ভারত গজলডোবার গেট খুলে দেওয়ায় ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। আর তিস্তার বুকে কৃষকদের লাগানো কয়েকশ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী।

জানা যায়, ভারত পুরো এই শুষ্ক মৌসুমে পানি দিয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কিউসেক। সেচ কাজে ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১১শ কিউসেক। অথচ গত সাত দিনে ভারত গজলডোবা গেট খুলে দেওয়ায় ব্যারেজ পয়েন্টে পানি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ কিউসেক। অতিরিক্ত পানি আসায় তিস্তা ব্যারেজের ৭টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।

এতে তিস্তা অববাহিকার দহগ্রাম, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিন্দুর্না, মহিষখোচা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডাসহ ১২টি ইউনিয়নের শতাধিক চর এলাকার ধান, গম, বাদাম, কাউন, কালোজিরা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, তামাক ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের প্রায় ৫০০ হেক্টর ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষ ফসলের ক্ষতি নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

চরাঞ্চলের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, জায়গা-জমি নেই, তিস্তায় জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে তারা সংসার চালান। এবার তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় জেগে ওঠা চরে প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে গম ও পেঁয়াজ রোপণ করেছেন তিনি।

কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে ব্যারেজের উজানে পানি ওঠানামা করায় গম, পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর তার মতো হাজার হাজার কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।

চরাঞ্চলের পেঁয়াজ চাষি ফজর আলী জানান, হঠাৎ এই চৈত্র মাসে তিস্তার পানি আসায় তার প্রায় এক একর আবাদি পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি বছরের চৈত্র মাসে এমন পানি আসে না, এ বছর হঠাৎ তিস্তার পানি এল। এখন পানির দরকার নেই। অথচ ভারত পানি দিয়ে তাদের মতো অসহায় কৃষককে বেকায়দায় ফেলেছে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের নিচু জমির অধিকাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে চরাঞ্চলের উঁচু জমির ফসলে সেচ-সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘উঁচু জমির ফসলে কোনো ক্ষতি হয়নি এ পানিতে। এ কারণে হঠাৎ আসা পানি কোনো চাষির স্বপ্ন কেড়ে নিলেও কাউকে দিয়েছে সাফল্যের সুযোগ। চাষিদের ঘরে হাসি-কান্নার মিলন ঘটিয়েছে অসময়ে তিস্তায় আসা পানি।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘পানি যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। বিগত ৩০ বছর আগে এপ্রিল মাসে তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। আর এ বছরে ঘটলো সেই ঘটনা। তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’