ঔষধি গুণসম্পন্ন শস্যদানা ‘চিয়া বীজ’। পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া বীজ অন্যতম। দক্ষিণ আমেরিকা ও মেক্সিকোয় ব্যাপকভাবে এ শস্যদানার চাষ হয়। তবে প্রথমবারের মতো রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছ ইউনিয়নে চাষ হচ্ছে চিয়া বীজের। পরীক্ষামূলক চাষ করে এর ভালো ফলন পাওয়া গেছে।
রংপুর অঞ্চলের মাটিতে চিয়ার বাম্পার ফলন কৃষকদের মাঝে এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। অনেক চাষি এই বীজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে হারাগাছের কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে চিয়া বীজ চাষ করেছেন। স্বল্প খরচে চিয়ার ব্যাপক ফলনের আশা করছেন তারা।
নিজের জমিতে চিয়া বীজের চাষ করেছেন কৃষক বাবু। তিনি বলেন, ‘বীজটা ভালো, আবাদ করতে খরচও কম। এবার জমিতে চাষ করেছি। এখন দেখছি বেশ ভালো হয়েছে আবাদ। তেমন খরচ নেই, পরিশ্রমও নেই। ফসল তো ভালো হয়েছে। মনে হয় অনেক লাভ হবে। অনেকেই এখন এ বীজ আবাদ করতে চায়।’
আরেক চাষি রহিম মিয়া বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে আমরা এর বীজ বপন করছি। বীজ বপন করার পর ছোট ছোট গাছ হলে ইউরিয়া দিয়ে তারপর ছিটিয়ে পানি দিছি। তার কিছুদিন পর পানি সেচ দিয়ে আবার ইউরিয়া দিয়েছি। তারপর দু-একবার কীটনাশক স্প্রে করছি। এখন ফুলও আসছে। আবাদ খুব ভালো হয়েছে। অন্য ফসলের চাইতে এই ফসলটা ভালো হয়েছে, খরচও কম।’
হারাগাছ ইউনিয়ন সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আল আমিন জানান, চিয়া বীজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। ১২০ দিনের মধ্যে এটি হারভেস্ট করা যায়। এই গাছের উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট হয়।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়, যেখানে শতকে তিন থেকে চার কেজি চিয়া উৎপাদন করা সম্ভব। এর বাজারমূল্য কেজি প্রতি ৪শ টাকা। সেই হিসাবে কৃষকরা এক বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। পরিচর্যাও করতে হয় খুবই কম।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, কানাডা ও কলম্বিয়াসহ কয়েকটি দেশে ঔষধি ফসল হিসেবে চিয়া চাষ করা হয়। আমাদের দেশে চিয়ার পরিচিতি ও ব্যবহার কম। তবে আমরা ব্যাপকভাবে এই বীজ চাষ করতে চাই। কারণ রংপুরের মাটি এই বীজ চাষের উপযোগী। ব্যাপকভাবে এই বীজ চাষ হলে কৃষক লাভবান হবেন।’
‘এই ফসলে পোকার আক্রমণ কম থাকে। যার কারণে কৃষকরা স্বাচ্ছন্দ্যে এই ফসল চাষ করতে পারেন।’
‘চিয়া বীজ খেলে মানবদেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। এ বীজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। সেই সঙ্গে ওজন কমানো, সুগার স্বাভাবিক রাখা, হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ফাইবারসমৃদ্ধ চিয়া পেট পরিষ্কার রাখে। ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়’, যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মেহেদী মাসুদ কানাডা থেকে চিয়া বীজ দেশে আনেন। তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার মাটিতে চিয়া বীজের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়।
চিয়া বীজ রোপণের জন্য জমি দুভাবে প্রস্তুত করতে হয়। প্রতি বিঘায় ১০ কেজি টিএসপি, ১০ কেজি পটাশ, পাঁচ কেজি জিপসাম, ২ কেজি ব্রোন সার ও বীজ লাগে ৩ কেজি। প্রতি শতকে বীজ উৎপাদন হয় তিন থেকে চার কেজি। বিঘায় উৎপাদন হয় অন্তত ১২০ কেজি। সে অনুযায়ী বিঘায় খরচ হয় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।