আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব কয়টি ব্যারাক জরাজীর্ণ। ঘরের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই টিনের ফাঁক দিয়ে অনবরত পড়ে পানি। ভেঙে গেছে দরজা-জানালার কপাটও। ভেঙে যাওয়া দরজা-জানালায় চটের বস্তা দিয়ে রেখেছে তারা। একটু বৃষ্টি হলেই ঘুম হারাম হয়ে যায় তাদের।
বলছি শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ধানশাইল ইউনিয়নের কুঞ্জবিলাস কান্দুলি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের কথা। বেহাল ঘরগুলোর মেরামতের দাবি তুলেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস প্রশাসনের।
উপজেলা ভূমি অফিসসূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে উপজেলার কান্দুলি গ্রামে আট দশমিক ৮ একর খাসজমির ওপর সেনাবাহিনী ‘কুঞ্জবিলাস কান্দুলি আশ্রয়ণ প্রকল্প’টি নির্মাণ করে। প্রকল্পে মসজিদ, কবরস্থান, পুকুর, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ টিনের তৈরি ছয়টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে দশটি করে ছোট কক্ষ রয়েছে।
প্রকল্পে দশটি পরিবারের জন্য যৌথভাবে চারটি শৌচাগার ও দুটি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকের জন্য একটি করে নলকূপ ও একটি কমিউনিটি সেন্টারও রয়েছে। ওই সময় সাত শতাংশ কৃষি ও আড়াই শতাংশ আবাসিক জমিসহ প্রতিটি সুবিধাভোগী পরিবারকে ব্যারাকের একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এতকিছু নির্মাণের পর ওই প্রকল্পে আর তেমন কোনো মেরামতের কাজ করা হয়নি। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের টিন। নেই দরজা-জানালার কপাটও। একটু বৃষ্টি হলেই নিদারুণ কষ্টে থাকে প্রকল্পের বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, সরকার ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও সংস্কার না করায় প্রকল্পের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরের ভেতর পানি পড়ে। এতে তারা নানা সমস্যার মধ্যে থাকলেও সরকারিভাবে তা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
প্রকল্পের বাসিন্দা হারবলা বেগম বলেন, ‘কতদিন ধরে আমরা কষ্ট করতাছি, কেউ খোঁজখবর নেয় না। ঘরের মধ্যে থাকবার পারি না। বৃষ্টি এলে টিনের চালা চুইয়ে পানি পড়ে। পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল দিয়েও লাভ হয় না। ঘরের ভেতর হাঁটুপানি জমে।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক দুদু মিয়া বলেন, ‘প্রতিটি ব্যারাকের চালের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’
ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই ঘরগুলোর অবস্থা নাজুক। এখানে প্রায় ২শ মানুষের বসবাস। তারা সবাই হতদরিদ্র ও দিনমজুর। তাই এটি মেরামতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘কিছু কিছু ঘর নষ্ট হয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। নিচু থাকায় পানির কারণে প্রকল্পের কয়েকটি জায়গার অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। এ বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘরগুলো মেরামত করা হবে।’