logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:১৩
হাওরের পানি কমায় কৃষকদের স্বস্তি, আছে শঙ্কাও
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

হাওরের পানি কমায় কৃষকদের স্বস্তি, আছে শঙ্কাও

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে। এতে কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষকের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তবে শঙ্কাও আছে। কারণ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের হাওর এলাকায় আবারো অকাল বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দিনের মধ্যে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।

ইটনার কৃষক আলী হোসেন জানান, জিওলের হাওরে ৪১ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। উজানের ঢলে পানি আসার পর থেকে জিওলের বাঁধেই সময় কাটছে তার। খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন, কখন যেন বাঁধ ভেঙে যায়। এমন দুশ্চিন্তা থেকেই গ্রামবাসীর সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওলের বাঁধের পাশেই নির্মাণ করেছেন আরেকটি বিকল্প বাঁধ।

তিনি বলেন, নদীতে পানি বাড়লে আমাদের কষ্টের সীমা থাকে না। কিন্তু শুক্রবার থেকে পানি আর বাড়েনি। এমনকি শনিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে দেখে স্বস্তি ফিরেছে। আশা জেগেছে ফসল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবো।

মিঠামইনের চারিগ্রামের বাসিন্দা ওহেদ মিয়া জানান, তিনি চারিগ্রামের বড় হাওরে পাঁচ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। গত কয়েক দিন পানি যেভাবে বেড়েছিল তাতে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু এখন পানি কমতে দেখে খানিকটা চিন্তামুক্ত হয়েছেন তিনি। পানি যদি আর না বাড়ে তাহলে ফসলের আর বেশি সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দৈনিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এর প্রভাবে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হওয়া বয়ে যেতে পারে। এছাড়া বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যান্য জায়গায় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে জেলার হাওর এলাকার ৩৩০ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইটনা উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওর। শুধু এ উপজেলারই ৩০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

আর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধনপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের দুটি হাওর একেবারে তলিয়ে গেছে। বাকি আটটি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী চর এবং খালবিলে চাষ হওয়া নিচু জমি তলিয়ে গেলেও মূল হাওরগুলো এখনও সুরক্ষিত আছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এছাড়া নিকলী উপজেলার সিংপুর এলাকার কুনকুনিয়ার হাওরে ধনু নদী তীরবর্তী চরের অনেক বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উজানের ঢলে নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। নৌকা নিয়ে পানির নিচ থেকে আধা পাকা ধান কাটছেন স্থানীয়রা।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে কিশোরগঞ্জ হাওরে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি বর্তমানে যে স্তরে আছে, মূল হাওরগুলো তার চেয়ে আরো এক মিটার ওপরে আছে। আসাম, মেঘালয় বা চেরাপুঞ্জিতে আর যদি ভারীবর্ষণ না হয় তাহলে হাওরে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘হাওরের কৃষকদের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেকেছে, সেসব জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। আবারো যদি বৃষ্টি হয়, তবে বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃষকদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’