দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের বদলি বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে।
রিট আবেদনে অর্থের বিনিময়ে বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ এবং বদলি বাণিজ্যে লেনদেন হওয়া একশ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আবেদনে সিন্ডিকেটের হোতা জামাল উদ্দিনের সকল ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের আজ (১০ এপ্রিল) রোববার এ রিট আবেদন দাখিল করেছেন।
আরো পড়ুন: নার্সদের বদলি সিন্ডিকেন্টের হাতে
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
রিট আবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিনকে বিবাদী করা হয়েছে। নার্স বদলি বাণিজ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এই রিট আবেদন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: হোতা জামালের সম্পদের পাহাড়
এর আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি চাকরির একটি স্বাভাবিক নিয়ম।
কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতংকের নাম। প্রত্যেক নার্সকে প্রতিবার বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন।
আরো পড়ুন: কে এই জামাল উদ্দিন?
গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর তিন মাসে প্রায় চার হাজার নার্সকে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকায় ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয়, বিশেষ একটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশের নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি পেশাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে।
এই নার্স বদলি বাণিজ্যের অন্যতম হোতা মো. জামাল উদ্দিন নামের কুষ্টিয়ার এক ব্যক্তি। যিনি উক্ত অধিদপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।
অধিদপ্তরে সবকিছুই যেন জামাল উদ্দিনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। বদলি বাণিজ্যের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন জেলা থেকে তার এবং তার আত্মীয় স্বজনের একাউন্টে জমা করা হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পাস একজন ভবঘুরে জামাল উদ্দিনের কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, রয়েছে আলিশান বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ। স্ত্রীর নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স।
আরো পড়ুন: তিন মাসে এত বদলি! লেনদেন কত?
সব মিলিয়ে এ যেন নার্স পেশাকে ধ্বংসের এক পাঁয়তারা। চাকরি হারানোর ভয়ে নার্সরা এই সিন্ডিকেট বাণিজ্যের বিষয় কোনো ধরনের অভিযোগ তোলার সাহস পায় না।
অথচ বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
ফলে নার্স পেশা পড়ছে হুমকির মুখে। হাজার হাজার নার্সের কাছ থেকে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্য করে নার্সদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননার অভিযোগ: নার্সসহ ৬ কর্মকর্তার মামলার সাক্ষ্য সম্পন্ন
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট নার্সদের পেশার স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। বদলির জন্য নার্সদের টাকা প্রদানে বাধ্য করা এবং তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া নার্সদের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।
তাই যেসব নার্স বদলির জন্য টাকা প্রদান করেছেন উক্ত টাকা ফেরত পাওয়া তাদের আইন সম্মত অধিকার।