logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৫২
তিন দিনেই বড় হারের শঙ্কা
ক্রীড়া প্রতিবেদক

তিন দিনেই বড় হারের শঙ্কা

দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় টেস্টের বয়স সবে তিন দিন। ব্যাটিং ব্যর্থতায় এখনই বড় হারের শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে শক্ত প্রতিরোধ না গড়ে তুললে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ হারতে চলেছে বাংলাদেশ, তা অনুমেয়। পোর্ট অব এলিজাবেথে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ৪৫৩ রান। জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ২১৭ রানে। ফলোঅন এড়াতে দরকার ছিল আরও ৩৬ রান। বাংলাদেশকে ফলোঅন করায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৩৬ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চা বিরতিতে দুই দল। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ ২ উইকেটে ৮৪ রান। তাতেই লিড দাঁড়িয়েছে ৩২০ রানের।

রোববার তৃতীয় দিনের খেলা নির্ধারিত সময় শুরু হয়নি বৃষ্টির কারণে। দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররা মাঠে নামার পরই বিপত্তি। শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ক্রিকেটাররা মাঠ ছেড়ে আশ্রয় নেন ড্রেসিংরুমে। ১৫ মিনিট শুরু হয় খেলা। প্রবল চাপে থাকা বাংলাদেশ মাঠে নেমে মুশফিক ও ইয়াসিরের ব্যাটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশও পেতে শুরু করল স্বস্তি। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৫ উইকেটে ১৩৯। সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মুশফিক ও ইয়াসির। তবে ৭০ রানের এ জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশভ মহারাজ। আলগা শটে তার বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইয়াসির। অল্পের জন্য হয়নি তার ফিফটি। ৮৭ বলে ইয়াসিরের রান ৪৬। মুশফিকের সঙ্গে নতুন পার্টনার তখন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাইমন হার্মারের বলে সুইপ শটে ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক। তারপর আত্মঘাতী শটে বিদায় নিতে হয় তাকে। ফিফটি করেই হয়তো নিজের কাজ শেষ মনে করলেন মুশফিকুর রহিম। আউট হয়ে গেলেন ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় অবিশ^াস্য এক শট খেলে।

সাইমন হার্মারের প্রথম বলে চার মেরে ফিফটি করেন মুশফিক, পরের বল লাগে প্যাডে। জোরাল আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো রিভিউ তখন বাকি নেই। রিপ্লেতে দেখা, আউট ছিলেন মুশফিক। তবে প্রোটিয়াদের আক্ষেপে পুড়তে হয়নি একটুও। পরের বলেই উইকেট উপহার দেন মুশফিক। হার্মারের ফুল লেন্থ বলে তিনি রিভার্স সুইপ করার চেষ্টা করলেন। ব্যাটের নিচ দিয়ে গিয়ে বল লাগল স্টাম্পে। ১৩৬ বলে ৫১ রানে আউট মুশফিক। মিরাজের নতুন সঙ্গী তখন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। লাঞ্চের পর থেকে আগ্রাসী সব শট খেলার চেষ্টা করছিলেন তাইজুল ইসলাম। খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তাই। সাইমন হার্মারের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে বলের পিচে তা গিয়েই উড়িয়ে মারেন তাইজুল। বল টার্ন করে তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে সহজ ক্যাচ উঠে যায় মিডঅফে। ১৪ বলে ৮ রান করে তাইজুল ক্যাচ দেন উইলিয়ামসের হাতে। পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন স্বীকৃত একমাত্র ব্যাটার মেহেদী হাসান মিরাজ। একের পর এক সঙ্গীকে হারিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় মহারাজকে উড়িয়ে মারলেন তিনি।

তবে টাইমিং হলো না যথেষ্ট ভালো। অন সাইডে সীমানায় একজন ফিল্ডারই ছিল। সøগ সুইপে তিনি বল তুলে দিলেন মিড উইকেটে অলিভিয়ের হাতে। ৩৫ বলে ১১ রান করে আউট মিরাজ। তার ইনিংসে ছিল একটি চারের মার। বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ২১৭। শেষ জুটিতে দুজনই ছিলেন পেসার। ইবাদত ও খালেদ শেষ উইকেট জুটিতে স্মরণীয় কিছু করতে পারেননি। হার্মারের বলে উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোনো রান না করা এবাদত হোসেন। বাংলাদেশ অলআউট ২১৭ রানে। বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে হার্মার ও মাল্ডার তিনটি এবং অলিভিয়ের ও মহারাজ দুটি করে উইকেট নেন। বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় বলেই বিপত্তি। আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। প্রথম ওভার করতে আসেন বাংলাদেশের এবাদত হোসেন। দ্বিতীয় বলে প্রোটিয়া ওপেনার সারেল আরউই ক্যাচ দেন প্রথম সিøপে। মিরাজের দিকে বল গেলেও তিনি দেখতে পাননি। বল গিয়ে লাগে মিরাজের পেটে। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন মিরাজ। একটু পর স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় মিরাজকে।

সাধারণ উচ্চতায় বল এলেও দেখতে পাননি মিরাজ। কেন বল দেখতে পারলেন না? ক্রিকবাজ জানাচ্ছে, লাইটের কারণে হতে পারে এমনটি। ক্রিকইনফো বলছে, বলটা ক্যাচ ধরার উচ্চতায় থাকলেও ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য সমস্যা হতে পারে মিরাজের। প্রায় ১৫ মিনিট মাঠের বাইরে থাকার পর ইনিংসের চতুর্থ ওভার শেষে তিনি ফিল্ডিং করতে নামেন। প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার হাত মেলান মিরাজের সঙ্গে। ততক্ষণে কোন উইকেট পড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকার। ক্রমে এগিয়ে যাওয়া দুই ওপেনারকে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনি ফেরত পাঠান প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগারকে। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন এলগার। ২৯ বলে করেন ২৬ রান। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও একটি ছক্কার মার। দলীয় ৮৪ রানের মাথায় দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় উইকেটের পতন। এবারো বোলার তাইজুল। এলবির ফাদে ফেলেন তিনি কিগান পিটারসেনকে। ২৫ বলে দুই চারে ১৪ রান করে ফেরেন তিনি।