logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৫৪
শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ
ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর প্রতিনিধি



শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ

ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে এসব অঞ্চলের ফসল।

ভোরের আকাশ জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে ঘণ্টাব্যাপী ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের নেকমরদ, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গীতে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। এতে আম, লিচু, ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী এলাকার মরিচ চাষি ফরিদুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন পরই মরিচ তোলার কথা ছিল তার। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে তার দুই বিঘা জমির মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবছর মরিচ বিক্রি করেই তিনি সংসারের সিংহভাগ খরচ বহন করে থাকেন। এখন শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ।

বাগান ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘সাড়ে তিনশ গাছের আমের গুটি ও পাতা ঝরে গেছে। আমি একদম পথে বসে গেলাম। এর আগে ঠাকুরগাঁও সদরের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। সে ধকল সামলাতে না সামলাতেই আবারো শিলাবৃষ্টি আমার সবকিছু সর্বশান্ত করে দিয়েছে। গাছে যেসব আমের গুটি আছে তা দিয়ে আর কোনো স্বপ্ন দেখতে চাই না।’

রানীশংকৈলের লেহেম্বার ভুট্টাচাষি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টার মাঠ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভুট্টার মোচাগুলো পাথরের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। গাছগুলো ভেঙে শুয়ে গেছে। আমার সাত বিঘা জমির তিন লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, এবারের শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মরিচ, ভুট্টা, আম লিচুর গুটিসহ আরো অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তবে কত হেক্টর জমিতে কোন্ কোন্ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা জানতে মাঠে কাজ করছি আমরা। পরবর্তী সময়ে এর সঠিক হিসাব জানাতে পারব।

অপরদিকে দিনাজপুরের কাহারোল, বোচাগঞ্জ ও বীরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন।

মূলত রোববার সকাল থেকেই জেলার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। দুপুর দুইটায় বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে টানা ২০ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১২ মিলিমিটার। এর মধ্যে জেলার কাহারোল, বোচাগঞ্জ ও বীরগঞ্জ উপজেলায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তবে দিনাজপুর সদর উপজেলায় সীমিত পরিমাণে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিনই দিনাজপুরের কোনো না কোনো উপজেলায় শিলাবৃষ্টি হচ্ছে।

বোচাগঞ্জ উপজেলার কৃষক রফিক ইসলাম জানান, এবার এমনিতেই লিচুর মুকুল কম এসেছে। তার উপর ফলও কম এসেছে। আমের অবস্থা একই। এর উপর আবার শিলাবৃষ্টি। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। এই বৃষ্টির কারণে আম, লিচু ও পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক মিলন ইসলাম বলেন, ‘শিলাবৃষ্টির কারণে টমেটো ক্ষেতের ক্ষতি বেশি হবে। গত কয়েক বছর ধরে এমনিতেই ফসলের দাম নাই। এর উপর আবার শিলাবৃষ্টি হলো। এখন আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের কপালে কি আছে।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, বোচাগঞ্জ ও বীরগঞ্জ উপজেলার কোথাও বৃষ্টি ও আবার কোথাও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, টমেটো, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হবে।