বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ, শ্রমিকের বেতন পরিশোধে মালিকদের ৫ হাজার কোটি প্রণোদনা ও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে উৎপাদন কার্যক্রম ঠিক থাকায় প্রতিযোগী দেশের তুলনায় রপ্তানির এ খাতে ছিল ধারাবাহিক সাফল্য। এ বছর করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে কারখানাগুলোয়। পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসায় ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা, উৎসব বোনাস পরিশোধের দাবি উঠেছে। এজন্য আজ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। খাতসংশ্লিষ্ট প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, শ্রমিকদের জন্য যা যা দরকার, মালিকপক্ষ সব করবে।
এছাড়া সরকারের নির্দেশনা মেনেই নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছে কারখানা মালিকপক্ষ। ঈদ ইস্যুতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি ও বোনাস সরকার নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি বোনাসের বিষয়। এ নিয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা এখনো কারখানা মালিকদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে এসময়ে সরকারের পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত সংস্থাগুলো মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সম্প্রতি গ্যাস সমস্যার কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকায় কিছু কারখানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে বেতন-বোনাস কারখানার নিয়মিত কাজের অংশ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ঈদের আগে শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য বুঝে পাবেন।
তৈরি পোশাক খাতের প্রধান বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৩, বিকেএমইএ’র ৮১৬, বিটিএমএ’র ৩১০ বেপজার ৩৬৯ এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৫৪টি কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে ৪৪ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন, যার প্রায় ৬০ শতাংশ নারী। তবে সম্প্রতি করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন এবং আরব দেশে গৃহকর্মী হিসেবে চলে যাওয়ার ফলে শ্রমকি সংখ্যা; বিশেষ করে নারী শ্রমিক সংখ্যা আগের থেকে কমেছে। এদিকে ঈদ আসন্ন হওয়ায় শ্রমিক সংগঠনগুলো অধিকার আদায়ে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
এর মধ্যে সম্প্রতি জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে পৃথক দুটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সংবাদ সম্মেলন করেছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। শ্রমিক নেতারা দাবি করছেন, কিছুসংখ্যক কারখানা মালিক প্রতি বছরই ঈদের আগে শ্রমিকদের মজুরি-ভাতাদি পরিশোধ না করে কারখানায় তালা মেরে পালিয়ে যান অথবা টালবাহানা করেন। এতে অনেক শ্রমিকদের আনন্দের ঈদ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছে। এদিকে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তৈরি পোশাক খাতের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সভা আহ্বান করেছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার শ্রম ভবনে ‘আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে’র সভায় সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। এতে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবনে বলে জানা গেছে।
শ্রম পরিস্থিতি ও শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে মজুরি বোর্ডের সাবেক সদস্য ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ভোরের আকাশকে জানান, বর্তমানে কারখানায় বেতন নিয়ে কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সামনে ঈদ। এতে বোনাস নিয়ে মালিকদের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়। আমাদের দাবি হচ্ছে, আগামী ২০ রমজানের মধ্যে সব শ্রমিকের পাওনা ও বোনাস যাতে পরিশোধ করা হয়। এছাড়া সরকারি ছুটির সঙ্গে শ্রমিকদের পাওনা ছুটি সমন্বয় করা হয়। শ্রমিকের যাতায়াত সুবিধার জন্য ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়া হয় এবং কারখানা খোলার তারিখও একসঙ্গে ঠিক না করে ভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।