স্বপ্নের শুরুটা ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। রংপুরে নির্মিত হবে হাইটেক পার্ক। এই প্রকল্প ঘিরে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থানের আশায় বুক বাঁধে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী। প্রকল্প অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রংপুরে হাইটেক পার্ক নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু সাড়ে চার বছর পার হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। বহুল প্রত্যাশিত হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ রংপুরবাসী।
জানা গেছে, রংপুরে হাইটেক পার্ক স্থাপনে নগরীর খলিশাকুড়িতে প্রায় ৯ একর খাস জমির বন্দোবস্ত করে রংপুর জেলা প্রশাসন। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, জমি পরিমাপ ও মাটি পরীক্ষার পর আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
অ্যাপ্রোচ সড়কের জমি অধিগ্রহণে সৃষ্ট জটিলতায় এর কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের দাবি, হাইটেক পার্ক নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিশাকুড়ি এলাকায় হাইটেক পার্কের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৯ একর জমি। দীর্ঘদিন পিলার (খুঁটি) আর কাঁটাতারে ঘিরে রাখা জমিটি আবারো কৃষি কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এখন কাঁটাতারের বেড়া নেই। কমে গেছে সীমানা নির্ধারণে ব্যবহৃত পিলারের সংখ্যা।
আগের সাইনবোর্ডটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আরেকটি সাইনবোর্ড সেখানে বসানো হয়েছে। এখন প্রকল্পের তথ্য সম্বলিত একটি মাত্র সাইনবোর্ডই হাইটেক পার্কের সাক্ষী।
নকশানুযায়ী, তিনটি ভবনের মধ্যে একটি হবে স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি সাত তলাবিশিষ্ট ভবন। এ ছাড়া দুটি তিন তলাবিশিষ্ট ক্যান্টিন ও অ্যাস্ফিথিয়েটার ভবন (স্টিল স্ট্রাকচার) এবং ডরমিটরি ভবন (আরসিসি) থাকবে।
হাইটেক পার্ক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রংপুরে কর্মসংস্থান হবে পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণীর। রংপুরের অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের অপেক্ষার পরও নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ রংপুরবাসী।
২০১৯ সালের আগস্টে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন হাইটেক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক হোসনে আরা বেগম। ওই সময় নির্মাণকাজ দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘প্রকল্পটি ভারত সরকারের সহায়তায় হচ্ছে। আমাদের সব কাগজপত্র বারবার পাঠাতে হয় এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায়। আবার সেখান থেকে চলে যায় ভারতীয় হাইকমিশনে। এসব প্রক্রিয়ার জন্য প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এসেছে। তবে ২০১৯ সালেই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।’
তবে এ আশ্বাসের পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। এদিকে ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আরো এক বছর আট মাস আগে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, ‘প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ-তরুণী পড়ালেখা শেষ করছেন। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত বেকার হয়ে থাকছেন। রংপুরে ভারী শিল্প কারখানা নেই, সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর হাইটেক পার্কটি গড়ে তোলা জরুরি। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
হাইটেক পার্ক প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন তরুণদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের উত্তোরণ ও বিকাশে সুযোগের দুয়ার খুলে দেবে বলে জানান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করতে মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিনি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের জন্য প্রায় ৯ একর খাস জমি দেওয়া হয়েছে। এটি ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। পার্কের প্রবেশমুখে যাতায়াতের জন্য কিছু জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার নামে এ পার্কের নামকরণের প্রস্তাবনাও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় চাইছে হাইটেক পার্কটি দ্রুত নির্মাণ করতে। নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করতে কর্তৃপক্ষও তৎপর রয়েছে।’
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল সারাদেশের জেলা পর্যায়ে ১২টি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে রংপুর হাইটেক পার্কের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ১৫৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা ধরা হয়। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।