ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ লেজার লাইটের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দীর্ঘদিনের। লেজার রশ্মি মানুষের একটা চুলকেও ছিদ্র করার ক্ষমতা রাখে। এর মাধ্যমে প্রচণ্ড তাপশক্তি সঞ্চার করা যায়, যা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার চেয়েও বেশি। তা ছাড়া এ রশ্মি কয়েক মাইক্রেন চওড়া বিধায় লম্বা পথ অতিক্রম করতে পারে। উদ্ভাবনের পর থেকেই ক্ষতিকর এ লেজার লাইটের ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার সূত্রপাত হয়। কেননা এ লেজার লাইটের কারণে প্রতিনিয়ত বিশ্বে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ক্ষতিকর লেজার লাইটের ব্যবহার অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে; অথচ এ দেশে এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত এ বস্তুটি! তাও আবার বছরের পর বছর। যে লেজার লাইটকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, সেটিকেই পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। তরুণ প্রজন্ম অনেক ক্ষেত্রে এটিকে সখের বশে ব্যবহার করছেন কিংবা না বুঝেই এটিকে খেলনা হিসেবে শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন অনেকে।
লেজার লাইটের তীক্ষ্ণ আলোতে চোখ মেলা দায়। অথচ পুলিশের নিত্য ব্যবহার করা চোখ ঝলসানো লেজার রশ্মি যানবাহনের চালকের কিংবা পথচারীর চোখ পড়ে। এটি মুহূর্তের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ যেমন হতে পারে, তেমনি অসহনীয় আলোতে চোখ ব্যথা থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার জোর আশঙ্কাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, লেজার লাইটের কারণে ক্ষতি হতে পারে রেটিনার। চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
রাজধানীসহ দেশের শহরাঞ্চলের সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে লেজার লাইট ব্যবহার করছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেÑ ক্ষতির কারণ বিবেচনায় দেশে লেজার লাইটের ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ; পুলিশ সদস্যদের এটি অফিশিয়ালি সরবরাহ করা হয়নি। স্বভাবতই প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায়, লম্বা সময় ধরে এ ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ লাইটের ব্যবহার চলছে কিভাবে; কিংবা এটা বন্ধে কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি কেন।
তীক্ষ্ম আলোসম্পন্ন লেজার লাইটের কারণে বিঘ্ন ঘটছে বিমান চলাচলেও। এ নিয়ে পাইলটদেরও অভিযোগের শেষ নেই। শুরু থেকেই লেজার রশ্মির শিকার হচ্ছেন বিমানের পাইলটরা। দীর্ঘদিন ধরে ককপিট ফ্লাইট লকের মন্তব্যে এ রকম অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে। ফলে বিমানবন্দর সংলগ্ন আশপাশের এলাকায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হয়েছে বারবার। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে সতর্কও করা হয়েছে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
চিকিৎসাবিদরা বলছেন, লেজার লাইটের আলো চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রায় প্রতিদিনই এমন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন রোগীরা। লেজার লাইটের কারণে অনেকে তাদের দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত হারিয়েছেন। উপরন্তু, লেজার রশ্মি সরাসরি মানুষের চোখে পড়লে এতে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এটি চোখের রেটিনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ম্যাকুলাতে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করে। ফলে রোগী ওই চোখে আর দেখতে পান না। পরবর্তীতে অপারেশন ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
দেশে লেজার লাইটের অননুমোদিত ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সমূহ ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ অবৈধ লাইটের ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
“