দ্বিতীয় টেস্টেও বাংলাদেশ হারতে চলেছে, তা বুঝা গিয়েছিল রোববার তৃতীয় দিন শেষেই। দেখার বিষয় ছিল, চতুর্থ দিনে কতটা লড়াই করতে পারেন সফরকারীরা। কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেল, তা সত্যিই হতাশার। প্রথম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৫৩ রানে। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে রান একটু বাড়ল, তবে লজ্জা ছাড়ল না। মাত্র ১ ঘণ্টায় বাংলাদেশ অলআউট ৮০ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী ৩৩২ রানের বড় ব্যবধানে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ পেল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা (২-০)। পোর্ট অব এলিজাবেথে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ৪৫৩ রান। জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২১৭ রানে। ফলোঅনে বাংলাদেশ পড়লেও দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৭৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের সামনে জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ৪১৩ রান। সে লক্ষ্যে খেলতে নেমে রোববার তৃতীয় দিন শেষে ২৭ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
গতকাল সোমবার বাকি ৭ উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল চিরচেনা ব্যর্থতায়। মাত্র ১ ঘণ্টা টিকতে পেরেছে মুমিনুলরা। দলীয় ৩৩ রানে দিনের প্রথম উইকেট পতন। মহারাজের বলে এলগারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এক রান করা মুশফিক। এরপর ধারাবাহিক বিরতিতে পড়ে উইকেট। প্রথম টেস্টের মতোই এবারো দ্বিতীয় টেস্টে স্পিন দিয়ে কুপোকাত করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭ উইকেট নেওয়ার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান কেশব মহারাজ। সিরিজ সেরার পুরস্কারও তিনিই জেতেন। মহারাজ একাই নেন ৭ উইকেট। বাকি ৩ উইকেট নেন হার্মার। বাংলাদেশের ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি ইয়াসির আলী, তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৬। আগের দিন মহারাজের বলে গোল্ডেন ডাক মারেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। গতকাল দিনের শুরুতেই আউট মুশফিকুর রহিম। মহারাজের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। ঠিকমতো পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় সিøপে। সেখানে কোনো ভুল করেননি ডিন এলগার। ৮ বলে ১ রান করেন মুশফিক। ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর থেকে উইকেট পড়েছে ধারাবাহিক বিরতিতে।
এরপর বিদায় নেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। টানা দ্বিতীয় ওভারে উইকেট পান মহারাজ। বাঁহাতি স্পিনারের বলে সুইপ করার চেষ্টায় রিকেলটনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্নের মতোই কাটল বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। টানা চার ইনিংসে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হলেন তিনি। ব্যর্থ হলেন লড়াইয়ের মানসিকতা দেখাতেও। বাজে এক শটেই বিলিয়ে দেন উইকেট। ঝুলিয়ে দেওয়া বলে অনেক দূর থেকে সুইপ করার চেষ্টায় খুব একটা সফল হননি, ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। ২৫ বলে মুমিনুল করেন ৫। শূন্যতে শেষ ইয়াসির আলী। সাইমন হার্মারের বলে সøগ করে চাপ সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি, সীমানা থেকে বেশ ভেতরে সহজ ক্যাচ নেন উইলিয়ামস। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি ইয়াসির। ক্রিজে তখন লিটন দাসের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭ রান লিটন দাসের। তিনি স্টাম্পিংয়ের শিকার। উইকেটে প্রবল টার্ন ও বাউন্স মিলছে, তবুও বেরিয়ে এসে খেলার ঝুঁকি নিচ্ছিলেন লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত দিতে হয় এর মাশুল। মহারাজের বলে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি। বাকিটা অনায়াসে সারেন কিপার কাইল ভেরেইনা। ৩৩ বলে ৭ চারে ২৭ রান করা লিটন মহারাজের পঞ্চম শিকার। ৬৯ রানে ৬ উইকেট নেই তখন বাংলাদেশের।
এরপর বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মহারাজের বলে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি, বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপার কাইল ভেরেইনার গ্লাভসে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৫ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় করেন মিরাজ করেন ২০। দুই বল পরেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান খালেদ। রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৭ উইকেট পেলেন মহারাজ। তাইজুলকে শূন্যতে বিদায় করে বাংলাদেশকে অলআউট করেন হার্মার। বল হাতে এ ইনিংসে ৭ উইকেট নেন প্রোটিয়া স্পিনার মহারাজ। বাকি তিনটি নেন সাইমন হার্মার। প্রথম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল মাত্র ৫৩ রানে। সেই টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ২২০ রানে। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও কপালে জুটলো বড় হার। সব মিলিয়ে টেস্ট সিরিজের বাজে হারের স্মৃতি নিয়েই এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় টাইগাররা। তারপরও এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাংলাদেশের জন্য সুখকর। কারণ প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে তামিম বিগ্রেড। সেটাই একমাত্র সান্ত্বনা।