‘সামনে ঈদ আসতাছে। ঈদের মধ্যে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবা? কী কী কিনে দিবা? বাবুকে কী কিনে দিবা?’ সেহরি খাওয়ার পর স্বামী খায়রুলকে কথাগুলো বলেছিলেন তাহমিনা। তবে ঈদে ঘুরা আর কেনাকাটা করা হবে না তার। এক দুর্ঘটনায় নিমিষেই শেষ সবকিছু।
স্ত্রী ও সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় খায়রুল। কান্না করে তিনি বলেন, ‘আমার কেউ রইলো না। একমাত্র ছেলেও চলে গেল। এখন কাকে নিয়ে আমি থাকবো। সন্তানের মুখটা দেখতে পারি এ জন্য বাড়িতে থেকে চাকরি করতেছি। আর সেই কলিজার টুকরা সন্তান ও বউ আজকে বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেল।’
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর হাতিয়া গ্রামে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ট্রেনের ধাক্কায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহতেরা হলেন- ঘাটাইল উপজেলার গারট্ট গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে তায়েবুল ইসলাম (৪৩), তার মেয়ে তাহমিনা বেগম (২৪) ও তার ৮ মাস বয়সী ছেলে তাওহীদ।
নিহত তাহমিনার শ্বশুর আলী আজগর বলেন, ‘১০ মিনিটও হয়নি নাতীটা বাড়ি থেকে গেছে। সেই নাতী আর বাড়ি ফিরল না।’
নিহত তায়েবুলের ছেলে ঈসমাইল হোসেন বলেন, ‘বাবা আমার বোন ও তার ছেলেকে নিতে হাতিয়া এসেছিল। আমাদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে তারা আমাদের বাড়ি আসছিল। তারা হাতিয়া রেলক্রসিংয়ে পৌঁছালে জামালপুরগামী ট্রেন ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’ অটোটিতে ধাক্কা দেয়। এতে রেলক্রসিং থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে অটোটি।’
‘বাবা ও ভাগ্নে তাওহীদ ঘটনাস্থলে মারা যায়। বোনটাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়। আমাদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল’ যোগ করেন তিনি।
আরো পড়ুন: ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল বাবা-মেয়ে-নাতির
এলেঙ্গা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের টিম লিডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিজের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালিয়ে তায়েবুল হোসেন তার মেয়ে ও নাতিকে কালিহাতীর হাতিয়া থেকে নিজের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে হাতিয়া রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় জামালপুর এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ইজিবাইককি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
‘ঘটনাস্থলেই তায়েবুল ও আট মাস বয়সী শিশু তাওহীদের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তাহমিনাকে নেওয়ার পথে তারও মৃত্যু হয়’, যোগ করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
টাঙ্গাইল রেল স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির আই সি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে দুজনের লাশ উদ্বার করি। আহত একজনকে হাসপাতালে পাঠায়। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।’