logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৫৯
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল
শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ, সেবা দিতে হিমশিম
আলআমিন হোসাইন, চাঁদপুর প্রতিনিধি

শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ, সেবা দিতে হিমশিম

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড

আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। নির্ধারিত শয্যার দ্বি-গুণেরও বেশি রোগীকে নিয়মিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ নার্সদের। এছাড়া শিশু ওয়ার্ডে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদ খালিসহ রয়েছে জনবল সংকট। সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চলতি এপ্রিল মাসের ৮ দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল শুক্রবার থেকে ৮ এপ্রিল শুক্রবার পর্যন্ত ২৪৯ শিশু ভর্তি হয়। এদের অধিকাংশই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এ জন্য খোলা হয়েছে ৮ শয্যার ‘ডায়রিয়া কর্নার’। যেখানে দৈনিক গড়ে ২৫-৩০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। এ জন্য ফ্লোরে আলাদা বেডের ব্যবস্থা করে তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট ও ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) ইউনিটে নিয়মিত শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এছাড়াও খিঁচুনি ও পানিতে পড়া রোগী রয়েছে। শুধু চাঁদপুর জেলা নয়, পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে রোগীরা এখানে সেবা নিতে আসেন।
হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে হাইমচর উপজেলার আলগীবাজার এলাকার জনৈক ব্যক্তি তার দু মাস বয়সী শিশু সন্তানকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে তার সন্তান জ্বরে আক্রান্ত। তাই তিনি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

চাঁদপুর পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের পারভীন বেগম জানান, তার কন্যা সন্তান গত কয়েক দিন ধরে পেটে গ্যাসের সমস্যায় আক্রান্ত। তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ভর্তি রেখে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহানারা জানান, নির্ধারিত শয্যার তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক রোগীকে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এত সংখ্যক রোগীর জন্য যে পরিমাণ নার্স প্রয়োজন তা নেই। তাই তারা প্রতি শিফটে মাত্র ৪ জন করে ডিউটিতে থাকেন। এতে তাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আসমা বেগম জানান, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। এ সমস্যার প্রধান কারণ হলো আবহাওয়ার পরিবর্তন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত গরম পরিবেশে শিশুদের রাখা যাবে না। সম্ভব হলে শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। এছাড়া শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে বাসি এবং বাইরের খাবার খেতে দেওয়া যাবে না। সব সময় পানি ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে। বেশি বেশি ফল খাওয়াতে হবে। ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে।

ডা. আসমা বেগম জানান, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন শিশু রোগীকে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আর বহির্বিভাগে দৈনিক ১৭০ থেকে ২০০ শিশু রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। কোনো কোনো দিন আরো বেশি শিশুকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়ে থাকে।

তিনি জানান, চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে শয্যার অধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যা হয়। শিশু ওয়ার্ডে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদটি খালি রয়েছে। সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ডা. আসমা বেগম বলেন, ‘আমিসহ দুজন সহকারী রেজিস্ট্রার যথাক্রমে ডা. বিপ্লব দাস ও ডা. মাহবুব আলী খান শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছি। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রোগীদের আমরা নিয়মিত ফোনেও চিকিৎসাসেবা দেওয়াসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। রোগীদের সেবা প্রদান করতে আমরা সব সময় প্রস্তুত।’

ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংখা মাত্র ৩৯। আমাদের হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সবসময় বেশি থাকে। নির্ধারিত শয্যার দ্বিগুণ সংখ্যক রোগীকে আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’