logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:২৮
রং মাখালেই ফিট
পলাশ প্রধান, গাজীপুর

রং মাখালেই ফিট

ফিটনেসবিহীন বাস

‘আমাদের গ্যারেজে যত গাড়ি চোখে পড়বে সবই ফিটনেসবিহীন। সমস্যা নেই। এসব গাড়িকে ফিটনেস দিতে সময় লাগে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন। এরই মধ্যে তৈরি হয় নতুনের চেয়েও বেশি সুন্দর।’ কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুর মহানগরের পূবাইল আলিরাজ গ্যারেজ মিস্ত্রী মো. সামছুদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘ঈদ আসলে কাজের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দুবছর ধরে করোনার জন্য কাজের চাপ কম হলেও রং করার কাজের চাপ কমেনি।’

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ও শিল্পনগরী থেকে ছেড়ে যাবে কয়েক লাখ মানুষ। পরিবহণগুলোর ওপর স্বাভাবিকভাবেই থাকবে বাড়তি চাপ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে প্রতিবছরের মতো এবারও পরিবহন মালিকরা তাদের বাতিল, ফিটনেসবিহীন, লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাসগুলো ‘ফিট’ দেখাতে কাজ করাচ্ছেন ওয়ার্কশপে।

টঙ্গী মিল গেট, হোসেন মার্কেট, বড় বাড়ি, বোর্ড বাজার, চান্দনা, কোনাবাড়ি, পূবাইল ও তুরাগে চলছে ফিটনেসবিহীন বাসকে ‘ফিট’ করার কাজ। এসব ওয়ার্কশপে মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি ও রং দেওয়া হচ্ছে।

ওয়ার্কশপগুলোতে গাড়ি মেরামতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। এসব গাড়ির কোনোটির ইঞ্জিন বা ব্রেকে সমস্যা, কোনোটির সিট ছেঁড়া, আবার কোনোটির বডিতে রং নেই।

কথা হয় কয়েকজন শ্রমিক ও ওয়ার্কশপ মালিকের সঙ্গে। তারা জানান, দুই মাস ধরে ওয়ার্কশপগুলোতে পুরোদমে চলে মেরামতের কাজ। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কাজের চাপ কম।

তুরাগ তামিম ওয়ার্কশপের শ্রমিক মো. সোহেল রানা বলেন, ‘এ পেশায় আমি ২০ বছর। গত দুই বছর ধরে করোনার কারণে কাজের চাপ কিছুটা কম। তবুও কাজের অর্ডার আছে। বছরে দুই ঈদে ব্যবসা করবে বলে এসব গাড়ি সার্ভিস করে থাকেন বাস মালিকেরা। আমরাও তাদের অপেক্ষায় থাকি।’

মিতালী ইঞ্জিনিয়ারিং মোটর ওয়ার্কশপের শ্রমিক রুস্তম মিয়া বলেন, ‘গাড়ির নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশ নতুন সেট দিয়ে ঝালাই করা হয়। পরে নতুন রং লাগিয়ে ছোটখাটো মেরামত করে ভাঙাচোরা এসব গাড়ি নতুন করা হয়। তবে এমনভাবে কাজ করানো হয় তাতে পুলিশও ধরতে পারবে না।’

এই ওয়ার্কসপের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কাজের চাপ অনেক কম। অনেক গাড়ির মালিকরা গাড়ি বিভিন্ন গ্যারেজে ফেলে রাখছে। এতে অনেক গাড়ি এ বছর রোডে নামছে না।’

রংমিস্ত্রি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই ঈদকে সামনে রেখে পুরনো গাড়ি রং করে নতুন রূপে সাজানো হয়। এতে যাত্রীরা আকৃষ্ট হয়। সময়মতো ডেলিভারি দিতে দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। গাড়িগুলোতে এমনভাবে রঙের কাজ করানো হয় যে সড়কে দায়িত্ব থাকা পুলিশ ধরতে পারবে না- এটি পুরাতন গাড়ি ছিল।’

এদিকে বাস মালিকরা বলছেন, রোডে বাস চললে ছোটখাটো ত্রুটি হতেই পারে। একটি ইঞ্জিন ও চেসিসের মেয়াদ ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ বছর। এর আগে তেমন কিছু হয় না। সড়কে যে দুর্ঘটনাগুলো হয় সাধারণত অসচেতনতা ও ড্রাইভারদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে হয়ে থাকে।

তুরাগ পবিরহণের মালিক মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছরই ঈদে তিনটি তুরাগ গাড়ি রং করে নতুন করে রাস্তায় নামানো হয়। বিশেষ করে বছরে দুই ঈদ সুন্দর করে করব এটাই আশা করি। এ বছর তিনটা গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি রং করানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন যানবাহন নতুন করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমাদের অভিযান হবে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস নেই, তাদের গাড়ি আটক করা হবে।’