logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:২৮
বিবিএস জরিপ
৪১.৪৬% মানুষ গ্রাম্য ডাক্তার ও ঘরোয়া চিকিৎসা নেন
শাহীন রহমান

৪১.৪৬% মানুষ গ্রাম্য ডাক্তার ও ঘরোয়া চিকিৎসা নেন

প্রতীকী ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ৪১ ভাগ মানুষ দোকান থেকেই ওষুধ কিনে খায়। থানা ও ইউপিনয়ন পর্যায়ে  ৪৬.৯৩ ভাগ মানুষ হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নেয়। ৪১. ৪৬ ভাগ মানুষ গ্রাম্য ডাক্তার ও ঘরোয়াভাবে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। আবার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে যায় না এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। সম্প্রতি বাংলা পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের গড় চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। জরিপে ছয় বছরের হিসাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, এই সময়ে মাথাপিছু গড় চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৩৪১ টাকা। শিশুদের ক্ষেত্রে মাথাপিছু এই ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮২১ দশমিক ১৭ টাকা। এতে আরো উঠে আসে পানযোগ্য পানির অভাবে ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়া। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই হার অনেক বেশি। প্রায় ৪৪ ভাগ রোগী বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশে^র ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেড়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও বিশেষ অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে নদী ভাঙনের প্রবণতা। সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি বছর দেশে গড়ে ২০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে বর্জ্রপাতে। গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতে হাওর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এর ফলে ২০১৬ সাল থেকে সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকায় স্থান দিয়েছে।

সম্প্রতি বিবিএসের জরিপে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি উৎপাদনসহ সার্বিক জাবীনযাত্রার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে সেই তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ (ইসিডিএস) প্রকল্প থেকে এই জরিপ চালানো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম এই জরিপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি খাতের উৎপাদনের ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করা ছাড়াও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ দুর্গত এলাকার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের বিপদাপন্নতা নিরূপণের জন্য এই জরিপ চালানো হয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, দুর্যোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জনসচেতনতা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা এর লক্ষ্য ছিল।

দেশের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষের চিকিৎসার বিষয়ের জরিপে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ২০১৫ থেকে ২০২০ সময়কালে জরিপ এলাকার  সদস্যরা ৪০ দশমিক ৬৮ ভাগ দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান। ৪৬ দশমিক ৯৩ ভাগ মানুষ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। ৪১ দশমিক ৪৬ ভাগ মানুষ গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে থাকেন।  ১৫ দশমিক  জিরো ৬ ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক, ১৪ দশমিক ৪৪ ভাগ এমবিবিএস ডাক্তার, ৫ দশমিক ১০ ভাগ কবিরাজ বা বৈদ্য, ১১ দশমিক ৪৩ ভাগ ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ২ দশমিক ২০ ভাগ মানুষ অন্যান্য জায়গা থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। অন্যদিকে জিরো দশমিক ২৬ ভাগ মানুষ কোনো চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত  ছয় বছরে রোগাক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৪৪ ভাগ ওষুধের দোকান, ১১ ভাগ সরকারি হাসপাতাল, ৯ ভাগ কবিরাজ বা বৈদ্য, ৮ ভাগ এমবিবিএস ডাক্তার, ৪ ভাগ ঘরোয়া চিকিৎসা, ১০ ভাগ  অন্যান্য জায়গা থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। এই সময়কালে ১৪ ভাগ মানুষ কোনো চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করত না।

এতে আরো দেখানো হয় দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষ পানযোগ্য পানির অভাবে ডায়ারিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জরিপের ছয় বছরের সময়কালের হিসাব তুলে দেখানো হয়েছে এই সময়ে পানযোগ্য পানির অপর্যাপ্ততার কারণে ৪৪ দশমিক ১৪ ভাগ ডায়রিয়ায়, ২০ দশমিক ২২ ভাগ আমাশয় আক্রান্ত হয়েছে। ঠান্ডা, সর্দি-কাশিতে ৪০ দশমিক ৩৭ ভাগ, চর্মরোগে ৩১ দশমিক ৪৭ ভাগ, জ্বরে ২৩ দশমিক ৭০, জন্ডিসে ১১ দশমিক ১০ ভাগ এবং ৫ দশমিক ৫৭ ভাগ মানুষ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ২০০৯-২০১৪ সময়কালে পানযোগ্য পানির অপর্যাপ্ততার অভাবে যথাক্রমে ৩৬.৬৬ ভাগ ডায়রিয়ায়, ২১ দশমিক  জিরো ৬ ভাগ  আমাশয়, ১৫ দশমিক ১৭ ভাগ সর্দি-কাশি, ৯ দশমিক ৯৭ ভাগ চর্মরোগ, ৯ দশমিক ২৭ ভাগ জ্বর, ২ দশমিক ৭৩ ভাগ জন্ডিস এবং ৫ দশমিক ১৪ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।

এই সময়ে দুর্যোগের কারণে জিরো থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে বন্যার কারণে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিশু অর্থাৎ ৫০ দশমিক জিরো ২ শিশু অসুস্থ হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থাৎ ১৯ দশমিক ৭৭ ভাগ শিশু জলমগ্নতায় অসুস্থ এবং প্রচণ্ড খরার কারণে ১৫ দশমিক ১৯ ভাগ শিশু অসুস্থার চিত্র উঠে এসেছে। এই সময়কালে সংশ্লিষ্ট এলাকার মাথাপিছু গড় চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৩৪১ টাকা। যার মধ্যে ১৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৯৮ জন শিশুর মাথাপিছু গড় চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮২১ দশমিক ১৭ টাকা। দুর্যোগে আক্রান্ত এসব মানুষ সরকার, এনজিও, আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্থানীয় ধনী ব্যক্তি, সমবায় সমিতি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।