logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১০:২৮
অসহায়দের পাশে বিদ্যানন্দের সুপারশপ
এক টাকায় ১ কেজি চাল, ১০ টাকায় ৫শ টাকার পণ্য
শিপংকর শীল

এক টাকায় ১ কেজি চাল, ১০ টাকায় ৫শ টাকার পণ্য

বিদ্যানন্দের সুপারশপে পণ্য কিনছেন এক ক্রেতা। ছবি- ভোরের আকাশ

যেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। নিত্যপণ্যের দাম লাগামের বাইরে, গরিবদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও যখন হাঁপিয়ে উঠছে, সেখানে মাত্র এক টাকায় মিলছে এককেজি চাল। অবিশ্বাস হলেও এক টাকায় এক কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে খোদ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। সেখানে শুধুই এককেজি চাল নয়, মাত্র দশ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৫শ টাকার পণ্য। এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’-এর ‘গরিবের সুপারশপ’-এ। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় ‘ইচ্ছেমতো কেনার স্বাধীনতা’ স্লোগানে এই সুপারশপ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নিম্নবিত্ত ও সুবিধাবঞ্চিত ক্রেতারা মাত্র ১০ টাকা দিয়ে প্রায় ৫শ টাকার পণ্য কিনছেন।

সমাজে যারা অসহায় তাদের জন্য খাবার বিতরণের পাশাপাশি শিক্ষাদান, এক টাকায় আহার, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল গড়ে তোলার পর এবার বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়ে এসেছে ‘গরিবের সুপার মার্কেট’।

জানা যায়, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সেচ্ছাসেবী সদস্যরা টোকেনের মাধ্যমে ১০ টাকা দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যাগ ভরে বাজার করছেন টোকেনধারীরা। তারা এক টাকায় এককেজি চাল, দুই টাকায় অ্যাংকর ডাল, তিন টাকায় মসুর ডাল, ছয় টাকায় তেল, দুই টাকায় নুডলস, এক টাকায় বিস্কুট, দুই টাকায় ছোলা, এক টাকায় লবণ ও এক টাকায় খেজুর নিয়েছে। তবে কাউকে ১০ টাকার বেশি পণ্য দেওয়া হয়নি। চাহিদামতো ১০ টাকায় যার যেটা প্রয়োজন ইচ্ছামতো সেটা নিয়েছে। প্রথম রোজার দিন দেড় শতাধিক ক্রেতাকে টোকেনের মাধ্যমে এ বাজার করার সুবিধা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে গার্মেন্টস কর্মী সাদিয়া ইসলাম বলেন, বিদ্যানন্দ আমাদের বন্ধু, গরিবের বন্ধু যখন যা চাই তাই পাই। শুধু মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে বাজার নয় প্রতিদিন এখানে বিনামূল্যে ইফতার করা যায়। ধনী গরিব সবাই একসঙ্গে ইফতার করি। এখানে কোনো বৈষম্য নাই। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টানের মধ্যেও ভেদাভেদ নেই। এখানে সকলেই সমান।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন অফিসার সালমান খান ইয়াছিন বলেন, বিদ্যানন্দের চাহিদা সাপেক্ষে ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নামে মাত্র ১০ টাকার মধ্যেই এই বাজার রাখা হয়েছে। যেখানে ১০ টাকায় প্রায় ৫০০ টাকার বাজার দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনে ১৫০ গরিব অসহায় পরিবারকে এই টোকেন দেয়া হয়। টোকেন দেখিয়ে তারা তাদের ইচ্ছেমতো প্রয়োজন অনুসারে যার যেটা চাহিদা, বাছাই করে সেটাই নিতে পারবে। পুরো রমজান মাসজুড়ে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন পৃথক পৃথক এলাকায় এই বাজার বসবে। কতৃপক্ষ জানান, ‘রোজা উপলক্ষে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। এখান থেকে টোকেনের মাধ্যমে ১০ টাকা দিয়ে ক্রেতারা বাজার করতে পারবে। বাজার বসার আগে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের খুঁজে বের করে এই টোকেন দেওয়া হয়। প্রথম রমজানে মিরপুর এলাকায় এই ‘গরিবের সুপারশপ’ উদ্বোধন করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও, অনেকে আবার ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করছে। তা না হলে ১০ টাকার বিনিময়ে ৫০০ টাকার বাজার দেয়া যেত না। রমজানের সময় এটা এক ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালে করোনার সময় এই কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে কেউ শীতবস্ত্র রেখে তার প্রয়োজনীয় অন্য কিছু নিতে পারবেন, আবার কেউ যদি কোনো কিছু দিতে চান তাহলে এখানে ওই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে পারবেন। ধরুন কেউ তার জমিতে কোনো ফসল ফলিয়েছে, সে ফসল রেখে একটা শীতবস্ত্র নিয়ে গেল। অদল-বদলের মাধ্যমে এসব করা হবে। এতে করে কোনো বস্তু বা জিনিস দ্বিতীয়বার ব্যবহারযোগ্য করা যাবে।

মো. রশিদ পেশায় একজন ভ্যান চালক। তিনি বিদ্যানন্দের সুপার শপ থেকে ১০ টাকার টোকেনে ৫০০ টাকার বাজার করেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। এই কষ্টের সময়ে ১০ টাকায় এতগুলা বাজার পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি। এই রকম চলতে থাকলে ঢাকা শহরে আমাগো আর কষ্ট করতে হবে না।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১৩ এর ডিসেম্বর থেকে। ঘরোয়া পরিবেশে রান্না খাবার বিলিয়ে দেওয়া হতো গরিব অসহায়দের মাঝে। কিশোর কুমার দাশের উদ্যোগে কল্যাণমূলক এই কাজে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রত্যেকেই কোনোরকম ব্যবসায়িক মনোভাবকে উহ্য রেখেই এসেছেন। অনেকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ও সময় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এভাবে প্রায় তিন বছর চলার পর ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে কিছু দাতা ফাউন্ডেশনটিতে অর্থ দান শুরু করেছে। প্রাপ্ত এ অর্থ সত্যিকার অর্থে কোন্ কাজে লাগছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য অডিট কমিটি রয়েছে। এ ছাড়াও ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অর্থ দানের আগে দাতাদের ফাউন্ডেশনের কাজকে স্বচক্ষে পরিদর্শন করার আবেদন থাকে।