নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কায় সচল রাখা হয়েছে করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম। খালি হয়ে গেছে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার ৯৯%। খালি শয্যাগুলো অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্রস্তুত রাখা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। মজুত রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণ। হঠাৎ নতুন ঢেউ মোকাবিলায় ঝুঁকি এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। গত টানা সাত দিন ধরে করোনায় মৃত্যু নেই। আর গত দুই মাস ধরে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা পরিস্থিতি। দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা পঞ্চাশের নিচে এবং শনাক্তের হার এক-শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছে মাত্র ১৩০ জন করোনা রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড ইউনিটের প্রধান ডা. মো. জাকির হোসেন খান ভোরের আকাশকে জানান, গত ১০ এপ্রিল সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে মোট ১৩ হাজার ১৭৩টি কোভিড শয্যার মধ্যে খালি ছিল ১৩ হাজার ৪২টি। অর্থাৎ খালি হয়ে গেছে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার ৯৯ শতাংশ। এদিন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাত্র ১৩০ জন করোনা রোগী। এভাবে সারা দেশের ১২০৪টি কোভিড আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ১১৬৪টি। অর্থাৎ মোট কোভিড আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ৯৭% শয্যা। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আগের মতোই সচল রয়েছে বলে জানান ডা. মো. জাকির হোসেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সামনের দিনগুলোতে যেকোনো করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে। চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সব কটি কার্যক্রম চালু রয়েছে। প্রতিদিন সারা দেশে ৮৭৯টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা চলছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর, স্থলবন্দরসমূহে যাত্রী স্ক্রিনিং সচল রয়েছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩, ৩৩৩ ও আইইডিসিআরের ১০৬৫৫ নম্বরে প্রতি মূহর্তে করোনাবিষয়ক স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। পুরোদমে চলছে করোনা টিকা কার্যক্রম। স্বাস্থ্যবিধি পালন, বিশেষ করে ন্যূনতম মুখে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ ভোরের আকাশকে জানান, করোনা মোকাবিলায় সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তার মানে এই নয় যে, দেশে করোনার সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে। বিশ্বে যত দিন করোনার সংক্রমণ অব্যাহত থাকবে তত দিন করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অবহেলা করা ঠিক হবে না। দেশে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার পরও নতুন ঢেউয়ের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যাবে না। এই আশঙ্কা থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সাজানো অবকাঠামো। খালি কোভিড শয্যাগুলো অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করার জন্য এখনো সুপারিশ করেনি জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় আমরা সফলতা পেয়েছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যা প্রশংসিত। সাময়িক প্রশান্তি পেলেও করোনা ভাইরাসকে নিয়ে ভাবার সময় শেষ হয়নি। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। অধিকাংশ শয্যা খালি পড়ে আছে। কিন্তু করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্ধারিত অবকাঠামো আগের মতোই রয়ে গেছে বলে জানান ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।