logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২৪
কেন দুই যুগেও গ্রেপ্তার হয়নি বোতল চৌধুরী
ইদ্রিস আলম

কেন দুই যুগেও গ্রেপ্তার হয়নি বোতল চৌধুরী

আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

দেশ-বিদেশে দেদারছে ঘুরে বেড়াতেন। ভিআইপিদের পার্টি সেন্টারে, মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপিদের সঙ্গে থাকতেন চার্জশিটভুক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। খোদ আইনের চোখে যিনি ফেরারি। অথচ যাকে দেখা গেছে গুলশান, বনানীর আভিজাত সব রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রোগ্রামে। করেছেন চাকরিও। কিন্তু দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও কেন ধরতে পারছিলেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাহলে কি এত বছর সংস্থার নাকের ডগায় ঘুরে বেড়িয়েছেন এই অপরাধী?

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবার ও সাধারণ মানুষের মনে। বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা যায় একটি প্রোগ্রামে পলাতক চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি বোতল চৌধুরী এক মন্ত্রীর হাত থেকে ক্রেস্ট উপহার নিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়। দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েকটি বড় কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪ বছর ধরে অনেকটা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়িয়েছেন আশিষ রায়। এসবি ক্লিয়ারেন্সসহ বিমানবন্দরের ডিউটি পাস পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দর ও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নানা অনুষ্ঠানে ছিল অবাধ যাতায়াত।

বিমানবন্দরের একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই চাকরির সুবাদে তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছিল বিমানবন্দরে প্রবেশের ডিউটি পাস। এই পাসটি সংগ্রহ করার আগে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তারা সশরীরে তদন্ত করেন। তখন কী তদন্ত করেছেন তারা? সঠিক তদন্ত হলে তো সে (বোতল) গ্রেপ্তার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এত বড় একটি অপরাধী এতদিন মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপিদের সান্নিধ্যে কীভাবে ছিলেন? নিয়মিত অফিসও করেছেন।

কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোতল চৌধুরীর ক্ষমতার উৎস সম্পর্কে। কেন এত বছর প্রকাশ্যে থাকলেও গ্রেপ্তার হয়নি তাও জানালেন তারা। সেসব সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে। সেই অনুষ্ঠানগুলোতে আমরাও ছিলাম।

ক্ষমতাসীন দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অনেক তৎপর। এত পলাতক আসামি ধরতে পারলে কেন বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে পারল না? তাকে এই সেল্টারগুলো বা প্রভাবশালীদের সংস্পর্শে চলার সুযোগ করে দিয়েছেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়া নামে পরিচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাই বলে মনে করেন তারা।

কীভাবে বোতল চৌধুরী ২৪ বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সবার চোখের সামনে দিয়ে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত দিন কী করেছে? জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এটা আমাদের থেকে আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। একজন মানুষ এত বড় একটি আলোচিত হত্যা মামলার প্রধান আসামি হওয়ার পরেও কী করে মন্ত্রীদের সঙ্গে চলতে পারেন বোঝেন? মূলত বোতল চৌধুরী এমন সব প্রভাবশালীদের সংস্পর্শে থেকে নিজেকে গ্রেপ্তার থেকে আড়াল করেছেন। আমাদের ধারণা, এটি করতে পেরেছে একমাত্র আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ছত্রছায়ায়।

বোতল চৌধুরী গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২৪ বছর ধরে সবার চোখের সামনে দিয়েই নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়িয়েছেন আশিষ চৌধুরী বোতল। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ছিল তার অবাধ যাতায়াত। তিনি একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের বড় পদে ছিলেন। সবশেষ একটি স্বনামধন্য এয়ারওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার- সিইও হিসেবে বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন আশিষ। বিমানবন্দরে প্রবেশের ডিউটি পাস রয়েছে তার কাছে। আর এই সুবিধা নিয়ে প্রভাবশালী ও রাজনীতিবিদসহ ভিআইপিদের বিমানবন্দরে সেবা দিতেন তিনি। আর এভাবেই ভিআইপিদের সংস্পর্শে থাকতেন আশিষ।

৫ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ২৪ বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ২৫/বি ফিরোজা গার্ডেন নামের বাড়ির ফ্ল্যাট-এ১ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

উল্লেখ্য, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি বোতল চৌধুরীর নাম।