বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। তাই এই উৎসবে সবাই এক সঙ্গে মেতে ওঠার জন্য অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। আর এবারো সাজগোজে ভিন্ন কিছু আনতে চাচ্ছেন তরুণীরা!
তবে এই গরমে কেনাকাটার ভিড় ঠেলে ওঠা কঠিন হলেও নববর্ষ বলে কথা! তাই রঙিন শাড়ি ছাড়াও নজর কাড়া সাজগোজ করতে কেনাকাটা করছেন সবাই।
এই দিন ভোরবেলা থেকেই শুরু হয় নানা রকম অনুষ্ঠান।
তার ওপর যদি গরম থাকে, তা হলে সারাদিন অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। তাই সাজটা খুব ভারি না হওয়াই ভালো, ন্যাচারাল সাজেই ভিন্ন রূপ নিয়ে আসলে মন্দ হয় না। বাঙালির রীতিনীতির ধরনটাই যেন আলাদা। একেকটি উৎসব-পার্বণ পালিত হয় একেক আঙ্গিকে।
প্রতিটি উৎসবেই প্রাণের আবেগে মিলিত হয় সবাই। জাতিধর্ম নির্বিশেষে এক কাতারে এসে দাঁড়ায় সবাই। বাঙালির তেমনি একটি চিরায়ত উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।
পুরো জাতি মেতে ওঠে বৈশাখী উৎসবে। আর আট-দশটা উৎসবের চেয়ে বৈশাখী উৎসবটা একটু ভিন্ন। ধীরে ধীরে উৎসবটি বাঙালির অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে।
প্রাণের উচ্ছ্বাসে, নাড়ির টানে একে অপরের ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে উদযাপন করে পহেলা বৈশাখ।
প্রতিটি ঘরে চলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি। বাঙালির জীবনে বৈশাখ আসে নব জাগরণের বার্তা নিয়ে। সব কিছুতেই সাজ সাজ ভাব লক্ষ্য করা যায়। এ সময়টায় কে না চায় নিজকে রাঙাতে।
গ্রীষ্মের বাড়তি গরমে কেমন শাড়ি পরলে ভালো লাগবে বৈশাখের সাজে, তাও ভেবে নিতে হবে। গরমে সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যেহেতু দিনের অনেকটা সময় শাড়ি পরেই থাকতে হবে, সে ক্ষেত্রে সুতি কিংবা সিল্কের শাড়িতেই আরাম পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বৈশাখের শাড়ি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁতে বোনা সুতি জামদানি শাড়ি কিংবা তাঁতে বোনা সুতি শাড়ির ওপর সুতার কাজ এবং ব্লক বাটিকে সুতির শাড়িগুলো বৈশাখের পোশাকে তুলে ধরে ভিন্ন রকম আমেজ...
এ ছাড়া সুতি কাপড়ের শাড়ির ওপর স্ক্রিন ও অ্যামব্র্রয়ডারির কাজের শাড়িগুলোও আপনি বেছে নিতে পারেন। বৈশাখের সাজ মানেই লাল পাড়ের সাদা রঙের শাড়ি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে নতুনত্ব। এখন আর লাল-সাদায় সীমাবদ্ধ নেই বৈশাখ।
ফ্যাশন-সচেতনরা বেছে নিচ্ছেন পোশাকে বিভিন্ন রং। হালকা গোলাপি, কমলা, মেরুন কিংবা নীল রঙের সুতি শাড়ির মধ্য দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন বৈশাখের সকালে।
শাড়ি বাছাইয়ের পাশাপাশি পছন্দের ব্লাউজ তৈরিটাও সমান গুরুত্ব পায় বর্ষবরণে। শাড়িটা সাদামাটা হোক কিংবা জমকালো, এখন ব্লাউজটা হওয়া চাই ভিন্ন ধাঁচের। ফ্যাশন-সচেতন সব নারীই এখন মনোযোগ দিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর ব্লাউজের দিকে।
এখনকার ট্রেন্ডটা হলো শাড়ির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট ব্লাউজ পরার। সুতি বা তাঁতের শাড়িগুলোর সঙ্গে কাঁথাস্টিচ, টাইডাই, প্যাচওয়ার্কের কাজ করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। গামছা কাপড়ের ব্লাউজও ভালো লাগবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পাইপিং লাগানো যেতে পারে।
মেকআপ
গরমে মেকআপ করাটা একটু ঝামেলার। কিন্তু হালকা মেকাপ তো করাই যায় প্রিপারেশন নিয়ে। তাই হালকা মেকআপের জন্য ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করে বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন। কারণ ফাউন্ডেশন বিবি ক্রিমের থেকে ভারি হয়ে থাকে। আর ভারি মেকআপ বেশিক্ষণ থাকলে অনেকেরই ত্বকে সমস্যা হয়।
মুখ ভালোমতো ধুয়ে ফেসিয়াল করে নিন। এবার মুখে বরফ ঘষে নিন। এতে মেকআপে আপনার ত্বকের ক্ষতি হবে না। এরপর ৫ মিনিট অপেক্ষা করে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন। শেষে প্রেসড-পাউডার ব্যবহার করুন। এতে মুখ উজ্জ্বল থাকবে।
এমন হালকা বেজ-মেকআপে সারাদিন স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
চুলের সাজ
গরমে চুল ছেড়ে না রেখে ছোট করে খোঁপা বা বা সাইড খোঁপা করে নিতে পারেন। চাইলে কয়েকটা ফুল খোঁপার আড়ালে লাগিয়ে নিতে পারেন। লাল বা সাদা রঙের ফুল খোঁপায় দারুণ ফুটে উঠবে। আর যদি বেলিফুলের মালা গুঁজে নিতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই! সালোয়ার-কামিজ বা ফতুয়ার সঙ্গে উঁচু করে পনিটেইল বা খোঁপা মানিয়ে যায় বেশ।
গহনা
শাড়ির সঙেঙ্গ চুড়ি তো লাগবেই। তবে কানের,গলার, হাতের জিনিস সব এক সঙ্গে পরলেও সাজটা ভারি যায়। তাই নিজের মতো যে কোনো অল্প গহনা বেছে নিন। একগোছা চুড়ি একহাতে পরে নিন, খোঁপার সঙ্গে ছোট ঝুমকা বেশ মানিয়ে যায়।
বেশি ভারি গহনা না পরে আরাম পাবেন এমন হালকা গহনা পরুন। চিকন মালা পরতে পারেন চুড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। চুড়ি কম পরলেও হাত সাজাতে নেইলপলিশ আর মেহেদি লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে হাতের সাজ পরিপূর্ণ দেখাবে। শুধু কানের দুলের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন রুপার নথ।
হালকা সাজে রুপার গহনাও মানানসই। ভিন্ন স্টাইলের সালোয়ার-কামিজ বা ফতুয়ার সঙ্গে এত কিছু না পরে উঁচু করে পনিটেইল বা খোঁপার সঙ্গে চুড়ি আর কানে ছোট দুল পরে নিন।