logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:১০
ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আগামীকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আগামীকাল

ড. হুমায়ুন আজাদ (ফাইল ছবি)

বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল ১৩ এপ্রিল। গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন রায়ের এ দিন ঠিক করে দেন।

১৮ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাতে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুটপাতে আক্রান্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ। যিনি তার লেখার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি পেয়ে আসছিলেন।

একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। ইসলামি জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদের ওপর ওই হামলা চালিয়েছিল বলে পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এদিকে কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের আগস্ট গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ওই বছর ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মৃত্যুর পর আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর সেই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেলকে সেখানে আসামি করা হয়।

২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আটক রয়েছেন। নূর মোহাম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

সালাহউদ্দিন সালেহীন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফিজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে এ মামলার আসামি করা হলেও পরে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী বিপুল দেবনাথ ভোরের আকাশকে জানান, ‘এ মামলায় মিনহাজ ও আনোয়ার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আগামীকাল এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য আছে। আশাকরি আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পাবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘ন্যায়বিচার পাওয়া সকলের অধিকার। আশা করছি, আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন। আসামিরা যে হত্যার সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রপক্ষ এমন কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই আশা করছি, বিজ্ঞ আদালত ন্যায়বিচার করবেন এবং আসামিরা খালাস পাবেন।’

বর্তমানে প্রয়াত কবি রফিক আজাদ, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক প্রয়াত কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, কবি বদরুল হক, তৎকালীন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রকাশনা সম্পাদক এবং মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ, ফটো সাংবাদিক ইফতেখার উদ্দিন পাভেল, হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবির , পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সহকারী সচিব আনিসুজ্জামান, তৎকালীন ঢাবি’র ছাত্র মো. আশরাফ সিদ্দিকি বিটু, জার্মান দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার মুজতবা আহমেদ মুরশেদ ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসক রঞ্জন কুমার দে, তদন্ত কর্মকর্তা ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ ৪১ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী বিপুল দেবনাথ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘২০১৫ সালে হরতাল অবরোধ, কোভিড ১৯ এর ছুটি , আসামিদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার কারণে বার বার পিছিয়ে যায় এ মামলার বিচার। মোট ৫ জন বিচারকের হাত ঘুরে ৬ষ্ঠতম বিচারক এ মামলার বিচার শেষে রায় দিতে যাচ্ছেন।’