ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে বলে বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো জানিয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। এ উপলক্ষে রমনার অনুষ্ঠান ঘিরে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বরণ উপলক্ষে রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।

রোজার কারণে এবারের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২০০১ সালকে মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আক্রান্তদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। কেউ আক্রান্ত হলে তাকে কোনো রাস্তা দিয়ে কীভাবে নেওয়া হবে, সেটার জন্য আলাদা আলাদা দল প্রস্তুত থাকবে।

জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু বন্ধু রাষ্ট্র জঙ্গিদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করছে ওই রাষ্ট্রগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু রেডিক্যালাইজড সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ করছি। এসব কারণেই বাড়তি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছি, কোনো ঘটনাই উড়িয়ে দিচ্ছি না। প্ল্যান করে একটি ছুরি বা ব্লেড নিয়ে কেউ হামলা করতে পারে। সুতরাং সব বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে পুলিশ। তবে বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে কোনো হামলার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্ষ বরণে অন্যান্য বছর থেকে এবার একটু ভিন্নতা থাকবে। মেলায় পান্তা-ইলিশ ও খাবারের দোকান থাকবে না। অনুষ্ঠানটি সীমিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে মানুষ এখান থেকে বের হয়ে খুব সহজে বাড়ি ফিরে ইফতার করতে পারে।

‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। যেখানে প্রত্যেকটি মানুষকে চেকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এসব এলাকায় সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি রমনার লেকে নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল মোতায়েন থাকবে। পহেলা বৈশাখের আগেই পুরো এলাকা সার্চ করা হবে। পুরো চত্বর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে’, বলেন তিনি।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দিতে হলে মাঝপথে যোগ দেওয়া যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের বিশেষ আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হলে আগে চেকিং হয়ে প্রবেশ করতে হবে। মাঝ রাস্তায় চাইলেই কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সদস্যরা কঠোর আচরণ করতে পারে।

ছায়ানটের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেলা ১১টার মধ্যে ছায়ানটের আয়োজন শেষ করতে হবে। আর দুপুর ২টার মধ্যে রমনা এলাকায় মেলা গুটিয়ে ফেলতে হবে। ১টার পরে প্রবেশের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

মেলায় ছোট শিশুদের না আনার অনুরোধ জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, এসব এলাকায় শিশুদের না আনার অনুরোধ করছি, কারণ এসব স্থানে খাবারের কোনো দোকান থাকবে না। মুখোশ পরে আসা যাবে না। উচ্চশব্দ তৈরি করে এমন বাদ্যযন্ত্র আনা যাবে না।

ইভটিজিং প্রতিরোধে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা মাঠে থাকবেন জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে অনেক মানুষ একত্রিত হয় সেখানে নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হন। আমাদের মায়েরা, বোনেরা, সন্তানরা ইভটিজিং ও খারাপ আচরণের শিকার হন। সেটি চিহ্নিত করতে আমাদের সাদা পোশাকে উল্লেখযোগ্য সদস্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকবে।