logo
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২২ ২২:৪৩
এ বছর হজের সুযোগ পাবেন ৬০ হাজার বাংলাদেশি
মো. রেজাউর রহিম

এ বছর হজের সুযোগ পাবেন ৬০ হাজার বাংলাদেশি


# ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি শুরু
# সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আগামী সপ্তাহের মধ্যে


বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য হজে গমনের দ্বার উন্মুক্ত করেছে সৌদি আরব সরকার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকাংশে স্বাভাবিক হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ মানুষকে চলতি বছর হজ করার সুযোগের কথা ঘোষণা করেছে দেশটি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার লোক হজে যেতে পারবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমুলক কাজকর্ম শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশটির সঙ্গে হজ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন সাপেক্ষে পুরো কর্মসূচি ঘোষণা করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

তবে শর্তের বেড়াজালে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা হজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ও শর্ত শিথিল করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হতে পারে।

পাশাপাশি হজ কার্যক্রম সীমিত ও হাজির সংখ্যা কমানোর কারণে এ বছর হজ গমনেচ্ছুদের ব্যয় বাড়তে পারে। সর্বশেষ সাড়ে ৩ লাখ টাকায় হজ করার সুযোগ পেলেও এবার তা বেড়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারিত হতে পারে। এ ছাড়া করোনার টিকা ছাড়া কেউ হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে হজ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের পর এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজ আগ্রহীর সংখ্যা ৫৪ হাজার জন। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক নিবন্ধিত নাগরিক রয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার। কিন্তু, সৌদি সরকার চলতি বছর হজ কার্যক্রম সীমিত করে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ মানুষকে পবিত্র এ কার্যক্রম সম্পন্নের সুযোগ দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সংখ্যার অনুপাত হিসাব করলে বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার লোক এ বছর হজে যেতে পারবেন।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির আগে সর্বশেষ বাংলাদেশ থেকে হজে গিয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার জন নাগরিক। এবার অর্ধেক লোক হজে যেতে পারবেন।

এদিকে, নিবন্ধিত ৫৪ হাজার হজ গমনেচ্ছু ব্যক্তির মধ্যে ৬৫ বছর বা তার বেশি কতজন নাগরিক সেই তালিকা চিহ্নিত করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। বেশি বয়সী নাগরিকদের বাদ দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন থেকে হজ শর্তের মধ্যে থেকে নিবন্ধনের ক্রমানুসারে তালিকার্ভুক্ত করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশ’কে জানান, চলতি বছর হজের বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে। এর পর নিবন্ধনের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, হজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একটি প্রাথমিক গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষর ও হজ যাত্রীদের সংখ্যা নির্ধারণ, হজ প্যাকেজের প্রস্তুতি, ব্যাংক হিসাব খোলা সংক্রান্ত কাজ, হজ যাত্রীদের বাড়িভাড়া, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জমাদি সংগ্রহ করা এবং সৌদি আরবে পাঠানো, এজেন্সির তালিকা, আকাইভকরণ, ফ্লাইট সিডিউল, আইবিএএন এর মাধ্যমে অর্থ পাঠানো, টিকা সংক্রান্ত কার্যক্রম, মৌসুমী হজ অফিসার নিয়োগ ও সৌদিতে পাঠানো ও প্রশিক্ষণ।

এ ছাড়া হাজিদের আনা-নেওয়ার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এরাবিয়ারন এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট চূড়ান্ত করার কাজও রয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হজের জন্য যে বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা হতে পারে, সেগুলো হলো ১. অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলে সৌদি আরব ১০ লাখ মানুষকে হজের অনুমতি দেবে। ২. হজ পালনকারীদের বয়স ১৮-৬৫ এর মধ্যে হতে হবে। ৩. হজ পালনকারীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। ৪. হজ পালনকারীদের এ বিষয়টি প্রমাণপত্রসহ নিশ্চিত করতে হবে যে, হজের আগের ৬ মাস কোনো অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে ছিলেন না। ৫. হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই করোনা ভাইরাসের টিকার দুটি ডোজ সম্পন্ন করার প্রমাণপত্র সংগ্রহে রাখতে হবে। ৬. গ্রহণ করা টিকা সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে। ৭. বিদেশিদের হজে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৩ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। ৮. টিকার প্রথম ডোজই অবশ্য ঈদুল ফিতরের আগে নিতে হবে এবং দ্বিতীয় ডোজ সৌদিতে পৌঁছার ১৪ দিন আগে নিতে হবে। ৯. পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি সর্বাত্মকভাবে অনুসরণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজ করার সুযোগ পেতেন।