চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেলসি। অসাধারণ এক ম্যাচ উপহার দিয়ে ৩-২ গোলে জিতলেও হতাশ হতে হয়েছে তাদের। ৫-৪ গোল গড়ে শিরোপা প্রত্যাশী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে তারা বিদায় নিয়েছে। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ১-৩ গোলে হারের পর বুধবার রাতে অ্যাওয়ে ম্যাচে তারা ৩-২ গোলে জিতেছে। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও ফুটবল সমর্থকদের চেলসি এক মহাকাব্যিক ম্যাচ উপহার দিয়েছে। যে ম্যাচে চেলসি তারকাদের ছিটকে দিয়ে এক মূহুর্তেই নায়কের আসনে বসেছেন রিয়াল তারকা করিম বেনজেমা।
মাত্র ১৬ মিনিটের এক ছোট্ট ঝড় চেলসির সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। অথচ ৮০ মিনিট পর্যন্ত তারা একচেটিয়া খেলেছে। রিয়ালকে নাস্তানাবুদ করেছে। আর ফুটবল সমর্থকদের বিষ্ময়ের সাগওে ঠেলে দিয়েছে।
চেলসির বিদায় আর রিয়াল মাদ্রিদকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার গোলটি করেছেন বেনজেমা। তার আগে রিয়াল মাদ্রিদে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার কাজটা করেছেন রদ্রিগো। ০-৩ গোলে পিছিয়ে থাকায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ব্যবধান কমান রদ্রিগো। উড়ন্ত এক বলে ডান পায়ে চমৎকার প্লেসিং করে রিয়াল মাদ্রিদকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন। তার এ গোলেই খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। রিয়াল মাদ্রিদ লড়াইয়ের একটা সুযোগ পায়। আর সে সুযোগেই নায়কের আসনে করিম বেনজেমা। হেডে অসাধারণ এক গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে তিনি সেমিফাইনালের টিকেট এনে দেন।
নিজেদের মাঠের খেলায় ১-৩ গোলে হারা চেলসি দূর্দান্ত ফর্মে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কতটা লড়াই করতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ঠ শঙ্কা ছিল। কিন্তু খেলা শরু হতে না হতেই সেই শঙ্কা ধীরে ধীরে চেলসির খেলোয়াড়রা উড়িয়ে দিতে থাকেন। শুধু তাই নয়, চেলসির সমর্থকরা একটা স্বপ্নও দেখতে শুরু করেন। আর সেই স্বপ্নের সিঁড়ির প্রথম ধাপটা তৈরি করে দেন ম্যাসন মাউন্ট। ১৫ মিনিটের সময় গোল করে তিনি চেলসিকে এগিয়ে নেন। সে সঙ্গে প্রথমার্ধে স্পষ্ট আধিপত্য দেখায়।
বিরতির পর খেলা শুরু হতে না হতেই আবার গোল পেয়ে যায় চেলসি। এবার গোল করেন অ্যান্তোনিও রুডিগের। মাউন্টের কর্ণার থেকে গোলটি করে তিনি চেলসি দুই গোলে এগিয়ে নেন। সে সঙ্গে ম্যাচের গোল গড় দাঁড়ায় ৩-৩। ম্যাচ তখন সমান সমান। চেলসির আধিপত্য এখানে শেষ হয়নি। ৭৫ মিনিটে পেয়ে যায় তারা ম্যাচের তৃতীয় গোল। টিমোর ওয়ার্নার রিয়াল গোলরক্ষক থিবু কর্তোয়াকে পরাভূত করে চেলসিকে ৩-০ গোলে এগিয়ে নেন। তার এ গোলের সুবাদে চেলসি সেমিফাইনালের টিকেট দেখতে থাকে। ৪-৩ গোল গড়ে এগিয়ে যায় তারা।
কিন্তু ম্যাচের নাটক তখন অনেকটা বাকি। আর বাকি অংশে লেখা রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্য গাঁথা। লুকা মডরিচের ক্রস থেকে রদ্রিগো দারুণ এক গোল করে রিয়ার মাদ্রিদের স্বপ্ন ফিরিয়ে আনেন। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর সেখানে মূল নায়ক এ মৌসুমে দূর্দান্ত ফর্মে থাকা করিম বেনজেমা। ৯৬ মিনিটের সময় অসাধারণ এক হেডে গোল করেন তিনি। তার এ গোলেই রিয়াল হার এড়াতে না পারলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলোত্তি বলেন, ‘এ ম্যাচে আমাদের অনেক ভুগতে হয়েছে। প্রথমার্ধে আমরা ভালো খেলেছি, সুযোগও তৈরি করেছি। কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়তে থাকি। আমাদের মধ্যে জয়ের ক্ষুধা ছিল না। কিন্তু আমরা দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার মতো খেলেনি। তবে তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পর আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হই। আমরা জানতাম ম্যাচে আমাদের ভুগতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। কেননা চেলসি একটা বড় দলের নাম। যাহোক যা হয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। আমরা পিএসজির বিপক্ষে একটা কঠিন ম্যাচ খেলেছিলাম। চেলসির বিপক্ষে তাই খেলতে হলো।’
রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় নাচো বলেন, ‘বার্নাব্যুতে আরো একটা চমৎকার রাত পার হলো। অসাধারণ এক লড়াই শেষে আমরা সেমিফাইনালে। ম্যাচে কি হয়েছে তার থেকে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা সেমিফাইনালে। যাহোক এখন আমাদের অনেক বিষয়ে আরো উন্নতি করতে হবে। তবে আমাদের দলটার নাম রিয়াল মাদ্রিদ। আমরা এখান থেকে শিখেছি কখনই হাল ছাড়তে হয় না। আমাদের ক্লাবের ডিএনএ হচ্ছে শেষ পর্যন্ত লড়তে হবে। তারপার মিশন শেষ করতে হবে।’