logo
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ১১:০২
মসজিদ ও পৌরসভার পুকুরের মাটি যায় কোথায়?
জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল

মসজিদ ও পৌরসভার পুকুরের মাটি যায় কোথায়?

ভেকু দিয়ে পুকুরের মাটি কাটা হচ্ছে

মসজিদ ও পৌরসভার পুকুরের মাটি যায় কোথায়? কথাটি অবাক করা মনে হলেও টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার জরাশাহীবাগ মসজিদ ও পৌরসভার মালিকানায় পুকুর থেকে মাটি বিক্রি করছে মসজিদ কমিটির সভাপতির ছেলে রাসেল খানশুর। তাকে বাঁধা দেওয়ায় অনেক সাধারণ মানুষকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পৌর এলাকারবাসীর।

টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌর মেয়রের কার্যালয় সংলগ্ন পৌরসভা এবং পার্শ্ববর্তী মসজিদ মালিকানার পুকুরের সংস্কার দেখিয়ে ভেকু এবং অবৈধ ট্রাফি-ট্রাক্টর ব্যবহার করে মাটি বিক্রির মহোৎসব চালাচ্ছেন রাসেল খানশুর। ভেকু দিয়ে পুকুরের পাড় কাটা নিয়ে পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ির বাসিন্দাদেরও মৌখিক অভিযোগের শেষ নেই।

এদিকে পৌর মেয়র বলেছেন, পুকুর সংস্কার এবং গভীরতা বৃদ্ধির জন্য মাটি কেটে গোরস্থান, মসজিদের রাস্তা তৈরি করা হবে। ২০-৩০ হাজার টাকার মাটি বিক্রি হলেও তিনভাগের সামান্য টাকা দিয়ে গাছ লাগানোসহ পৌরসভার উন্নয়নে ব্যয় হবে।

মসজিদের পুকুরের মাটি বিক্রি, সেটাও আবার সভাপতির ছেলে হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কাজটি যদি বেআইনিভাবে করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, জরাশাহীবাগ জামে মসজিদ, পার্শ্ববর্তী গোরস্থান এবং পুকুর নিয়ে ১৬৭ ডিসিমেল জায়গার ভেতরে প্রায় ৮০ ডিসিমেলের মধ্যে পুকুর অবস্থিত। দুই বছর পূর্বে পৌরসভা পুকুরের মালিকানা দাবি করে স্থানীয় যুবকদের কাছে লিজ দেয়। পরে পুকুরের মালিকানা জটিলতায় লিজটি স্থগিত করে পৌরসভা এবং মসজিদের মালিকানায় নেওয়া হয়। পুকুরের বিতর্কিত লিজ বাতিল পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আড়ালে চলে গেলেও সম্প্রতি মাটি বিক্রি শুরু হবার পর সবার সামনে চলে আসে।

মসজিদের সভাপতি মাটি বিক্রির জন্য তার ছেলে রাসেল খানশুরকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেন। মাটি বিক্রির বিষয় নিয়ে মসজিদ ও গোরস্থানের সভাপতি এবং পৌর মেয়রের দুই ধরনের বক্তব্য উল্লেখ করেন। একদিকে মসজিদ কমিটির সভাপতি পুকুরের মাটি বিক্রির জন্য কমিটির সঙ্গে কোনো মিটিং বা রেজুলেশন করেননি বা দরকার নেই বলে জানান। অপরদিকে পুকুর সংস্কারের জন্য মাটি কেটে পাড়ে ফেলে মসজিদের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পৌরমেয়র।

পুকুর পাড়ের বাসিন্দারা বলেছেন, ভেকু দিয়ে এতটাই খাড়া করে মাটি কাটা হচ্ছে যে বৃষ্টির ঢলে পুকুরের পাড় তো ভাঙবেই, সঙ্গে পাড়ের বাড়িগুলোও ভেঙে যাবে।

আকবর আলী নামে একজন বলেন, মেয়র ও সভাপতির ছেলে দুজনে মিলেই এই মাটি বিক্রির মহোৎসব চালাচ্ছেন। যাতে কেউ কিছু না বুঝে সে জন্য একে অপরের বদনাম করে। মসজিদ কমিটির সভাপতি হয়ে যদি মসজিদের মাটি বিক্রি করে, তাহলে এর থেকে জঘন্য কাজ আর কী হবে বলেন? রাসেল যে মাটি খেকু এলাকার সবাই তা জানে। তাই এই মাটি বিক্রি বন্ধ না করলে আশপাশের বাড়ি-ঘরের অনেক ক্ষতি হবে।

মিলন মাহমুদ নামে একজন বলেন, ‘পৌর মেয়র ও সভাপতির অনুমতি নিয়েই মাটি কাটতাছেন। যদি একজন জনপ্রতিনিধি এ ধরনের কাজে জড়িত থাকেন, তখন কী আর বলার থাকে। সাধারণ মানুষের কষ্ট যদি এরা না বুঝে তাহলে বলেও বা লাভ কী? তাই বলি মেয়র সাহেব এ সমস্ত মাটি খেকুদের সঙ্গে না চলে সাধারণ মানুষের কষ্টটা বুঝেন। যে পুকুরের মাটি কাটতেছে, তার পাশে থাকা বাড়ি-ঘর বর্ষার দিন আসলেই ভেঙে যাবে। তখন এই সভাপতি ও মেয়র কিন্তু এগিয়ে আসবেন না। এখন তাদের টাকা দরকার, তাই তারা ব্যবসা করতাছেন।’

নামে প্রকাশ না করার শর্তে পুকুর পাড়ে বসবাসরত একজন বলেন, ‘মসজিদের জায়গার মাটি যায় কোথায়? আমাদের ঘর বাড়ি ধ্বংস করে কী পুকুর সংস্কার করা হবে? নাকি এ এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না? যমুনা নদীর ভাঙনে মানুষ কোনো কূলকিনারা পায় না। আর যেভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটতেছে, তাতে বর্ষায় এসব বাড়ি ভেঙে যাবে।’

জড়াশাহীবাগ জামে মসজিদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন খানশুর বলেন, ‘কমিটির সবাই সম্মত আছে, মাটি বিক্রির বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। পৌরসভার মেয়রই মাটি নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন। মাটি বিক্রির জন্য নিলাম বা কোনো রেজুলেশন করা হয়নি। আমার ছেলেকে মাটি বিক্রির দায়িত্ব দেওয়াতে কারো কোনো আপত্তি নেই।’

পুকুর সংস্কার, মাটি বিক্রির বিষয়ে বাসাইল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ বলেন, ‘মাটি বিক্রি করে যে টাকা হবে তা সমান তিন ভাগে ভাগ হবে। পৌরসভার ভাগের টাকা দিয়ে উন্নয়ন কাজ করা হবে। তবে রাসেল যদি মাটি অন্য কোথাও বিক্রি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’