logo
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২১
পোস্টার ছেঁড়ায় দুই শিশুকে নির্যাতন
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা

পোস্টার ছেঁড়ায় দুই শিশুকে নির্যাতন

কুমিল্লা নগরীতে কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টা

কুমিল্লা নগরীতে এক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়ার অপরাধে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি শিশুদের পরিবার থেকে তিন হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নগরীর রেসকোর্স এলাকায় গত রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নির্যাতিত শিশুদের পরিবার। এমনকি স্কুলেও যাচ্ছেন না ওই শিক্ষার্থী।

ওই দুই শিক্ষার্থী হলো- কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র এনসাল মো. আবদুল্লাহ আদিল ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সামিউল মোত্তাকিম মাহিম। সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই। কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় তাদের বাসা।

ভুক্তভোগী সামিউল মোত্তাকিম মাহিম জানায়, সপ্তাহ দু-এক আগে স্কুলে যাওয়ার পথে সে এবং তার খালাতো ভাই দুষ্টুমি করে দেয়ালে লাগানো একটি ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। ওই পোস্টারটি ছিল কুমিল্লা নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমের। রোববার বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে মনিরুল ও তার লোকজন আদিলের পথ রোধ করে। তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে মনিরুলের ঘরে নিয়ে যায়।

সেখানে আদিলকে বন্দি করে রাখে মনিরুল। পরে আদিল পোস্টার না ছেঁড়ার কথা জানায়। তখন সে বলে, মাহিম ছিঁড়েছে। এ কথা শোনার পর মনিরুল ও তার লোকজন মাহিমদের বাসায় যায়। এ সময় তারা মাহিমকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যেতে চায়।

মাহিমের নানা-নানি হাত জোড় করে ক্ষমা চায় এবং পোস্টার ছেঁড়ার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে। পরে মনিরুল ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন হাজার টাকা নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ভবিষ্যতে এমন কাজ করলে পা বেঁধে উল্টে পেটানোর হুমকি দিয়ে যায় মনিরুল।

মাহিমের নানা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহনেয়াজ বলেন, ‘আদিল ও মাহিম আমার নাতি। তাদের দুজনের বাবা নেই। আমরা রেসকোর্সে ভাড়া থাকি। রোববার বিকেলে আমাদের বাসায় এসে মনিরুল ইসলাম ও তার লোকজন আমার নাতিকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। তার অপরাধ কি জানতে চাইলে তারা বলে ও পোস্টার ছিঁড়েছে।

‘এ কথা শোনার পর আমি ও আমার স্ত্রী তাদের কাছে ক্ষমা চাই। তবুও তারা থামেনি। বারবার বলতে থাকে ওকে পেটাবে। পরে আমরা বলি ফেস্টুন ছেঁড়ার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। তখন মনিরুল ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৩ হাজার টাকা নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ভবিষ্যতে এমন কাজ করলে পা বেঁধে উল্টে পেটানোর হুমকি দিয়ে যান।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমার নাতি দুজন স্কুলে যেতে ভয় পায়। ভয়ে আতঙ্কে বিষয়টি আমরা কাউকে জানাতে পারছি না।’
অভিযোগের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ছেলে দুটো আমার ফেস্টুন ছিঁড়ছে। এটার সিসি ফুটেজ আছে। তবে চড়-থাপ্পড় দেওয়া কিংবা জরিমানা আদায়ের ঘটনা ঘটেনি।’

বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’
কোতোয়ালি মডেল ওসি সহিদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পায়নি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ওই লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’