logo
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৩৯
পোশাকশিল্পে শ্রমিকস্বল্পতা
উপেক্ষার পরিণতি সুখকর হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক

পোশাকশিল্পে শ্রমিকস্বল্পতা

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

পোশাকশিল্পের প্রশ্নে বাংলাদেশের রয়েছে সর্বোচ্চ খ্যাতি অর্জনের গল্প। তৈরি পোশাকশিল্প খাতে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ মর্যাদার স্থান অর্জন করে নিয়েছে। অথচ দেশের পোশাক তৈরির কারখানাগুলোকে ভুগতে হচ্ছে দক্ষ শ্রমিক সংকটে! পোশাকশিল্প খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ। এ শ্রমিকস্বল্পতা নিয়েই চলছে তৈরি পোশাকশিল্প। এসব কারণে স্বভাবতই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এ সংবাদ উদ্বেগের, উৎকণ্ঠার।


১২ এপ্রিল দৈনিক ভোরের আকাশ ‘দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার প্রক্রিয়া হ্রাস পাচ্ছে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উঠে আসে, তৈরি পোশাকশিল্পের মেশিনের উন্নতি ও শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক তৈরি হওয়ার পথ সঙ্কুচিত হচ্ছে, কারখানায় দক্ষ শ্রমিক প্রবেশের সুযোগ সীমিত হচ্ছে।


করোনা মহামারির পর থেকে তৈরি পোশাকশিল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিক না থাকার কারণে কারখানাগুলো ১০ থেকে ২০ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। কারখানার সম্প্রসারণে বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পন্ন হলেও শ্রমিকের অভাব কাটছে না। এর ফলে ক্রেতাদের কাছে থেকে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও সাব-কন্ট্রাক্টে অন্য কারখানায় কাজ করিয়ে সরবরাহ করতে হচ্ছে। অনেক কারখানা কার্যাদেশ দেওয়ার সময়সীমার বাধ্যবাধকতার কারণে কার্যাদেশ নিতে পারছে না। এতে কাজ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।


তৈরি পোশাক কারখানায় মেশিন আধুনিক হওয়ার কারণে মেশিনপ্রতি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তার অনুপাত কমে এসেছে। তবে তা নির্ভর করছে উদ্যোক্তার সক্ষমতার ওপর। খবর মতে, যেসব কারখানা বড় এবং আধুনিক মানে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে, সেসব কারখানার মেশিন অতি আধুনিকায়ন করা হয়েছে, শ্রমিকের দক্ষতা বেড়েছে বা দক্ষ শ্রমিকের সমাবেশ ঘটানো সম্ভব হয়েছে- সেসব কারখানায় অপারেটররা একাই একটি প্রসেসের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন। এর ফলে হেলপারের প্রয়োজন কম হয় বিধায় মেশিনপ্রতি শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে তুলনামূলক দুর্বল কারখানা বা ছোট কারখানাগুলো অতি আধুনিক মেশিন সংগ্রহ করতে পারেনি, বেশি বেতন দিয়ে ভালো শ্রমিকও নিতে পারেনি। ফলে কম দক্ষতার শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কারণে সমস্যায় নিমজ্জিত হচ্ছে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এন্ট্রি লেভেলের হেলপার বা অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে এটা ঠিক। বর্তমানে তৈরি পোশাক কারখানায় মেশিন-শ্রমিক অনুপাত ২.৩ বা এর চেয়ে কিছুটা বেশি। অর্থাৎ কারখানায় প্রতিটি মেশিনের বিপরীতে ৩ জন শ্রমিক রয়েছেন। কয়েক বছর আগে মেশিনপ্রতি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩ এর ওপরে।


বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, পুরানো পদ্ধতিতে নিয়োগ পাওয়া শ্রমিক দিয়ে কারখানার শ্রমিকের চাহিদা মিটছে না। নামমাত্র প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া অদক্ষ বা আধাদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে পোশাক কারখানাগুলো। কিছু কিছু কারখানা স্ব-উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন অপারেটর নিয়োগ দিচ্ছে। তার পরও দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়ে যাচ্ছে।
তৈরি পোশাকশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। কাজেই উদ্ভূত সমস্যা দূরীকরণে মনোনিবেশ করতে হবে, দক্ষ শ্রমিক তৈরির সুবিধার্থে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পোশাকশিল্পের সমস্যাকে উপেক্ষার পরিণতি সুখকর হবে না মোটেই।

“পোশাকশিল্পের প্রশ্নে বাংলাদেশের রয়েছে সর্বোচ্চ খ্যাতি অর্জনের গল্প। অথচ দেশের পোশাক তৈরির কারখানাগুলোকে ভুগতে হচ্ছে দক্ষ শ্রমিক সংকটে! পোশাকশিল্প খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ। এ শ্রমিকস্বল্পতা নিয়েই চলছে তৈরি পোশাকশিল্প। এসব কারণে স্বভাবতই ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন”