logo
আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৪৫
ফেরির সংখ্যা বাড়ানো এবং ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবি
ঈদযাত্রা: দুর্ভোগের আরেক নাম শিমুলিয়া-বাংলাবাজার
রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর

ঈদযাত্রা: দুর্ভোগের আরেক নাম শিমুলিয়া-বাংলাবাজার

দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে স্বল্পসংখ্যক ফেরি ও নির্দিষ্ট সময়ে (সকাল-বিকেল) ফেরি চলাচল করায় আসন্ন ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। ঈদে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো এবং ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বর্ষা মৌসুমে (জুলাই ও আগস্ট মাসে) পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে কয়েক দফায় পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে। ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর পাইল ক্যাপ। এই পরিস্থিতিতে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ১৮ আগস্ট দুপুরের পর থেকে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর কয়েক দফায় সীমিত আকারে ফেরি চালু হয় এবং বন্ধও করা হয়।

এরপর শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি ঘাটে স্থানান্তর করা হয় ফেরিঘাট। তবে দিনের বেলা মাত্র দুটি ফেরি চলে মাঝিকান্দি রুট দিয়ে। এদিকে গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছোট ছোট পাঁচটি ফেরি দিয়ে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রী পারাপার শুরু করা হয়

এ দিকে নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, নৌরুটে ফেরি পারাপার হতে বাংলাবাজার ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ফেরির সংখ্যা কম এবং সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফেরি চলাচল করায় সকল যানবাহন পারাপার হতে ব্যর্থ হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থেকে বিকেল হয়ে গেলে বিকল্প পথে চলে যেতে হয় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসা যাত্রীদের। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের।

ফেরিতে করে পদ্মা পাড় হচ্ছেন মানুষজন

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে বর্তমানে শুধু দিনের বেলায় ফেরি সার্ভিস চালু রয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রো রোসহ মাত্র পাঁচটি ফেরি চলে। দুই নৌপথে মোট সাতটি ফেরি দিনের বেলা চলাচল করছে। গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেলে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, রোগীবাহী গাড়িসহ ছোট যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পারাপার বন্ধ রয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাবাজার ঘাটে সরেজমিনে কথা হয় ঘাটে পারের অপেক্ষায় থাকা খুলনা থেকে আসা ট্রাকচালক মহিদুলের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকলে দ্রুতই ফেরিতে ওঠা যায়। আর ফেরিতে উঠতে পারলে পদ্মা পার থেকে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু ফেরিতে উঠতে পারাটাই চ্যালেঞ্জ। ঈদে এমনিতেই যাত্রীদের চাপ বাড়ে। এ সময় ফেরির সংখ্যা ও চলাচলের সময় না বাড়ালে ভোগান্তি বাড়বে। সকালে ঘাটে এসেছি, এখনো (দুপুর ১২টা) ফেরিতে উঠতে পরিনি। ফেরি বেশি থাকলে ঢাকা গিয়ে ঘুমাতে পারতাম।’

ফেরি থেকে নামছে যাত্রীরা। ফাইল ছবি 

 

পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সচালক মামুন বলেন, ‘ঘাটে রোগী পারাপারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। তবে ঈদে ফেরি না বাড়ালে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’

বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ফেরিতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। ঈদ মৌসুমে নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোটের পাশাপাশি ফেরিতেও যানবাহন ও যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকে। ভিড়ের মধ্য ফেরিতে উঠতে গিয়ে গত বছর ছয় জন যাত্রী মারাও গেছে।

বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যে লঞ্চগুলো প্রস্তুত রয়েছে। ধারণক্ষমতা ও সরকারি নির্দেশনা মেনেই লঞ্চে যাত্রী পারাপার করা হয়ে থাকে। তবে এবার যেহেতু ফেরি চলাচল সীমিত, তাই লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় বাড়বে।

ঢাকার বনশ্রী থেকে আসা মাদারীপুরগামী লঞ্চযাত্রী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গত বছর ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হতে গিয়ে ৫/৬ জন লোক মারা গিয়েছিল। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবার লঞ্চ ও ফেরির সংখ্যা বাড়াতে হবে। তা হলে সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে।’

বিআইডব্লিউটিএর মেরিন কর্মকর্তা (শিমুলিয়া ঘাট) আহমদ আলী বলেন, ‘বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তÍ হয়নি। এখন পর্যন্ত আগের নিয়ম অনুযায়ী ফেরি চলাচল করছে।’

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরি সার্ভিস বাড়ানোর বিষয়টি জানিয়েছি। বর্তমানে বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি মিলিয়ে দিনের বেলা সাতটি ফেরি চলাচল করছে।