logo
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৩৮
মহাসড়ক বেচাকেনা চক্রের সেই গোলাম ফারুক গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাসড়ক বেচাকেনা চক্রের সেই গোলাম ফারুক গ্রেপ্তার

মহাসড়ক বেচাকেনা চক্রের প্রধান গোলাম ফারুক ও তার এক সহযোগীকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।


* সরকারি জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ
* আসল মালিক বাধা দিতে গেলেই চালায় হত্যাচেষ্টা
* সংশোধিত দলিলেও প্রতারণা


জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মহাসড়ক বেচাকেনা চক্রের প্রধান গোলাম ফারুক ও তার এক সহযোগীকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। প্রতারণা করে ব্যাংক থেকে তারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।

র‌্যাব জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিলসংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। যেখানে ভিকটিমকে নিজ জমি থেকে জোরপূর্বক উৎখাত করার চেষ্টা করা হয়। এ উদ্দেশ্যে গোলাম ফারুক ও তার সহযোগী ফিরোজ আল মামুনসহ অন্যরা গত ২৬ মার্চ ও ৬ এপ্রিল জামির আলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে।

আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, তারা রাজধানীর বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক রেখে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্যও দেয় তারা।

শুক্রবার ৯১৫ এপ্রিল) দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, একটি হত্যাচেষ্টার মামলার তদন্ত ও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ১৫ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা। সরকারি জমি বন্ধক রেখে একটি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুই দফায় এ ঋণ দেওয়া হয়। তবে সেটি ধরা পড়ার পর আবার সংশোধন দলিল করেন। এবার আগের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে ব্যাংকে জমা দেয়। সংশোধিত দলিলের জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে ব্যাংক জানতে পারে সেটিও ভুয়া।

সংশোধিত দলিলের জমির আসল মালিক জামির আলী। ২৭ শতাংশ ওই জমি দখলে নিতে একাধিকবার তার ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টা চলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে অভিযুক্ত গোলাম ফারুক ও তার সহযোগী ফিরোজ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রয়, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রিচেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। ওই ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয় তদন্ত পর্ষদ গঠন করে। তদন্তে একটি প্রতারক চক্র মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি কয়েকটি সরকারি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে ব্যক্তি মালিকানায় নিবন্ধন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যদিও এসব জমি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কর্তৃক অধিগ্রহণ করা।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার গোলাম ফারুক জানায়, সে ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতীত এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করে। বিদেশি ব্যাংকের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে সরকারি জমিকে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করে।

১৯৪৮ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার আগের জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করে অভিযুক্ত ব্যক্তি। জালিয়াতির সাহায্যে সে ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করে। পরে ওই দলিলমূলে তৎকালীন মালিকের ছেলের কাছ থেকে গ্রেপ্তার গোলাম ফারুক তার স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করে আরেকটি দলিল তৈরি করে। একই বছরে তার স্ত্রী হতে ওই জমি নিজের নামে দলিল করে নেয়। যার সাফ কবলা দলিল নম্বর ৮৮৮০।

মহাসড়কের জমি নিজের দেখিয়ে ব্যাংক লোন
জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল ও মহাসড়কের জমিকে নিজের বলে দেখিয়ে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক দেখায়। এজন্য সে আরো ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রি করার নোটিশ জারি করলে ব্যাংক সরেজমিন গিয়ে দেখতে পায় ওই জমিটি সরকারি সম্পত্তি। পরে সে ভুল সংশোধন দলিল করে পূর্বের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে দেয়।

এক্ষেত্রে তিনি মামলার বাদীর ও ভুক্তভোগী জামির আলীর জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করে। তখন ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গিয়ে জানতে পারে সেটিও ভুয়া। কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে জমিসংক্রান্ত প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতির অপরাধে রাজউক কর্তৃক একটি, বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চারটি ও পাবলিক বাদী হয়ে ৩টিসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে।