logo
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:১৩
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাভারবাসী
কামরুল হাসান, সাভার (ঢাকা)

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাভারবাসী

ড্রেনে জমে আছে ময়লা

ঢাকার সাভারে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই শুরু হয় মশার রাজত্ব। এরই সঙ্গে জনমনে বাড়ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়।

এর থেকে প্রতিকার পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মশা নিয়ে পোস্ট দিয়ে অনেকেই তাদের শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করছেন তারা। শুধু বসতঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত নয়, মশার উপদ্রব থেকে চলতি পথেও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার অদূরে সাভার পৌর এলাকার চিত্র এটি।

পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকার ড্রেনে জমে আছে ময়লা পানি। পলিথিন, চিপসের খালি প্যাকেটে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে ড্রেনের অনেক স্থানেই দীর্ঘদিনের জমে থাকা পানিতে ভাসছে মশার লাভা। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই পৌরসভার পক্ষ থেকে ময়লা পরিবহণের ট্রাকে করে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। জমে থাকা এ সকল বর্জ্য মূলত মশার বংশ বিস্তারের অন্যতম কারণ।

ইতোমধ্যে সাভারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, মশা নিধনে সাভার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ দিলেও তেমন কোনো লাভ হয়নি। এছাড়া করোনা মহামারির সময় ডেঙ্গু নতুন করে আতংক ছড়াচ্ছে বলেও দাবি তাদের।

পৌর এলাকার রিকশাচালক কালাম বলেন, ‘শুধু বাসা নয়, এখন রিকশা চালানো অবস্থায়ও মশা কামড়ায়। মশার জন্য কোথাও একটু শান্তিতে বসতে পারি না। বর্ষায় মশার উপদ্রব আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা মো. আবুল হোসেন জানান, এখন যেসব মশায় কামড় দেয়, এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলার্জির মতো দানা সৃষ্টি হয়। এদের অত্যাচারে দিনের বেলায় দোকানপাটেও বসা যায় না। মাঝে মধ্যে মশার ওষুধ দিলেও বাসাবাড়ির আনাচে কানাচে দিতে দেখা যায় না। মশক কর্মীরা শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সড়কেই ওষুধ ছিটায়। এতে মশা মরে না। বরং বাড়ে।

বিভিন্ন ওয়ার্ডের বসবাসরত বাসিন্দারা জানান, সাভার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত মশা নিধনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সামনে বর্ষাকালকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গুর আগাম প্রস্তুতি নিয়ে সাভারবাসী চিন্তিত থাকলেও এতে তেমন মাথাব্যথা নেই পৌরসভার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার ভোরের আকাশকে বলেন, মশার বিভিন্ন প্রজাতি আছে। এর মধ্যে এডিস মশা বেড়ে গেলে ডেঙ্গু বাড়তে পারে। তবে এডিস মশা না বেড়ে কিউলেক্স বাড়লে তেমন রোগ হয় না। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত কিউলেক্স মশার বিস্তার বাড়ে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ডোবা, খাল, নালা ও ঝিল থাকে।

এ বছরও কিউলেক্স মশার প্রকোপ অনেক বেশি। কিউলেক্স মশা ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে ওইভাবে রোগ ছড়ায় না। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু কিছু জেলায় এই মশা ফাইলেরিয়া রোগ ছড়ায়। যেটাকে বাংলায় গোত্র রোগ বলে। এখনই জরুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মশার বংশ বিস্তার।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে। আমরা চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুত এবং আমাদের কাজ চিকিৎসা দেওয়া। মশা মারার ব্যাপারটি পৌরসভার। তারা যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমাদের মশার ব্যাপারে কিছু করার নেই।’

সাভার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল গনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমাদের তিনটা ফগার মেশিন আছে। এই তিনটা ফগার মেশিন দিয়ে আমরা মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি। এছাড়া আমরা আর কি করবো?’