নিয়ম না মানায় যশোরে শতাধিক অবৈধ ইটভাটাকে জরিমানা ও অভিযানকালে সেগুলোর অনেক অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও থামছে না অবৈধ ইটভাটার কাজ। সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে ফের এসব ভাটায় চলছে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ।
তবে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
ইটভাটা আইন-২০১৩ এবং সংশোধনী ২০১৯-এর ৮ ধারায় কতিপয় স্থানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা ও নিয়ন্ত্রণ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, জলাভূমি, কৃষিজমিসহ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না।
বিশেষ স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক গবেষণাগার প্রভৃতি এলাকা থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে। নতুবা তা অবৈধ হবে। অথচ যশোর সদরের রামনগর কানাইতলা এলাকার ভৈরব ব্রিকসটি যশোর মনিরামপুর সড়কসংলগ্ন কৃষিজমির ওপর অবস্থিত। ভাটার সীমানা যেখানে শেষ সেখানেই রয়েছে ভাটপাড়া দাখিল মাদ্রাসা।
আবার সদরের সতীঘাটা বাজারের পাশে যেখানে আশরাফুল মাদরিস নামে মাদ্রাসার সামনেই সাহা ব্রিকস নামে বিশাল ইটভাটার কাজ চলছে। ১০-১২টি ট্রাক, ট্রাক্টর সারাদিন মাটি টানছে মাদ্রাসার গেটের সামনে দিয়েই। সাড়ে ৮শ শিক্ষার্থীর ওই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হতে ভয় পায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায়।
ভৈরব ব্রিকসের মালিক, ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাজির আহমেদ মুন্নু ও তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম। তারা জানেন ভাটাটি অবৈধ। এর আগেও অভিযান চলেছে, তারপরও অবৈধভাবে ভাটা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে নাজির আহমেদ মুন্নু জানান, অভিযান চলেছে, ভাটাটি অবৈধ কিন্তু অনেক টাকা খাটানো, নানা বিবেচনায় কাজ করা হচ্ছে।
সাহা ব্রিকসের মালিক সনৎ কুমার সাহা স্বীকার করেছেন তার ভাটাটি অবৈধ। তিনি জানান, ২০২০ সালে সেখানে অভিযান চালিয়ে কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। ১০ লাখ টাকা জরিমানাও দিতে হয়েছে।
তারপরও কেন চালাচ্ছেন, জানতে চাইলে মুন্নু ও সনৎ কুমার দুজনই জানান, এমন হিসেব করলে যশোরে তো ইটভাটা চলতেই পারবে না।
তারা সুপার ব্রিকস, আসলাম ব্রিকস, বাবুল ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ইটভাটার উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমার তো জরিমানা হয়েছিল, ওইসব ভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও তো চলছে।’
তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল জানিয়েছে, ভাটা মালিকদের পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন অলিখিতভাবে সময় দিচ্ছে। এসব খাতে তাদের বিনিয়োগ অনেক তাই সেগুলো উঠিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছে। যদিও এই বক্তব্যের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসন একমত নয়।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘গত বছর আমাদের অফিসের পক্ষ থেকে ৯৩টি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত ৩২টি ভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় জরিমানা আদায়সহ বিভিন্ন ভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তারপরও ভাটাগুলো চলছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অভিযান পরিচালিত হওয়া অনেক ভাটা পুনরায় চালু হয়েছে। এটা দুঃখজনক। ম্যাজিস্ট্রেট প্রাপ্তিসাপেক্ষে আবারো অভিযান পরিচালিত হবে।’
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ কঠোরভাবে পালিত হবে। অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।’