logo
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ১১:৪০
পানের আশ্চর্য গুণ!

পানের আশ্চর্য গুণ!

রসিয়ে রসিয়ে মনের আনন্দে পান খান অনেকেই। কেউ কেউ নিয়মিত খেয়ে থাকেন, আবার কেউ কেউ মাঝেমধ্যে খান। অনেকে আবার মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য পান চিবিয়ে থাকেন। এই পানের সঙ্গে সুপারি যেমন থাকে, তেমনি থাকে অন্যান্য উপাদেয় সামগ্রী। পান তো স্বাদ বা মজার জন্য খেলেন, জানেন কি এর কত উপকার?


দেহের ক্লান্তি ও স্নায়বিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য কয়েকটা পান পাতার রস এক চামচ মধু দিয়ে খেলে নাকি তা টনিকের মতো কাজ করে। খাবার হজম হতে সাহায্য করে। পান পাতা সেবনে দেহের চর্বি বা মেদ এবং ওজনও কমে বলে জানা গেছে।

 

এবার জেনে নিন পান খাওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা-


হজমে সাহায্য করে: পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ লালার কারণেই হজমের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে, যার ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।


মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। যার ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয়।


যৌন শক্তি বাড়ায়:  এটি একটি পুরানো প্রথা, তবে কার্যকর। পানের রস যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। আগেকার দিনে নববিবাহিতরা বেশি বেশি পান খেতেন।


গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করে : পান খেলে পেটে বায়ু জমে কম। যার ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টির সুযোগ পায় না। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরিও রোধ করে। যার ফলে পেট ফাঁপে না।


মুখ ও দাঁতের উপকার করে:  দাঁতের মাঢ়ি দূষিত হলে ফুলে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে কুলকুচি করলে ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে যায়। মুখগহ্বরে কোনো ক্ষত হলে পানের রসে তার উপশম হয়। পানের রসে এসকর্বিক অ্যাসিড আছে, যা একটি চমৎকার এন্টি-অক্সিডেন্ট। এটা মুখের ক্যানসারও প্রতিরোধ করে।


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:  পান রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। ফলে পানে রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য।


সর্দি বের করে:  বুকের ভেতর কফ/সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হলে তা বের করতে পানের রস কার্যকর। এক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে কয়েকদিন খেতে হবে। এতে বুকে জমা কফ বেরিয়ে যাবে।


মাথাব্যথা দূর করে মাথাব্যথা হলে কপালে পানের রস লেপে দিলে দ্রুত মাথাব্যথা কমে যায়।


ঠান্ডা লাগা দূর করে:  ঠান্ডা লাগা সারাতে পান চমৎকার কাজ করে। ঠান্ডা লাগলে সর্দি কাশিও হয়। এক্ষেত্রে পানপাতা গরম পানি দিয়ে ছেঁচে রস বের করতে হবে। এ রসের সঙ্গে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ও আদার রস মিশিয়ে খেতে হবে।


ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়:  পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টি-অক্সিডেন্ট; যা ক্যানসারের ঝুঁঁকি কমায় এবং দেহে ক্যানসার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এ জন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে তাতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করুন। রোজ এটি খেতে পারলে ক্যানসারের ঝুঁঁকি অনেকটাই কমে যাবে।


শিশুদের পেটব্যথা কমায়:  পেটে ব্যথা হলে ছোট্ট শিশুরা কাঁদতে থাকে। বড় শিশুরা পেট চেপে ধরে কাতরাতে থাকে। এ অবস্থায় পান পাতার চকচকে পিঠে নারিকেল তেল মাখিয়ে তা গরম করে সেই পাতা পেটের ওপর চেপে ধরে সেঁক দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পরপর এভাবে কয়েকবার সেঁক দিলে পেটের ব্যথা কমে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, সেঁকের সময় তাপটা যেন বেশি না হয়।


তবে পানের কিছু দোষও রয়েছে। পানের নতুন পাতা শ্লেষ্মা বাড়ায়। পান হজম করে বটে, তবে বেশি খেলে অজীর্ণ হয়। পানের বোঁটা ও শিরার রস ইন্দ্রিয়ের শক্তি কমিয়ে দেয়। তাই পানের বোঁটা খাওয়া উচিত নয়। যারা রুগ্ন, দুর্বল, ক্ষীণ স্বাস্থ্যেও অধিকারী; তারা পান খাবেন না। মূর্র্ছা রোগী, যক্ষ্মা রোগী ও যাদের চোখ উঠেছেÑ তারও পান খাবেন না।