logo
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:০৮
বিদেশে পাঠানোর নামে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশে পাঠানোর নামে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৪

রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব

রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় বিপুল পরিমান পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও টিকেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিদেশে পাঠানোর নামে নারীদের জিম্মি ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। কামরুল চক্রের মূলহোতা। অপর ব্যক্তিরা তার সহযোগী। তাদের জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠাচ্ছে।

শনিবার (১৬এপ্রিল) কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

গত রাতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুল আহম্মেদ (৪২), সহযোগী মোঃ খালেদ মাসুদ হেলাল (৩৬), তোফায়েল আহম্মেদ(৩৮) ও মোঃ জামালকে (৪২) আটক করা হয়েছে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, ১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি মাউস, ১টি কীবোর্ড, ১টি ইউপিএস, ১০০টি ভিসার কপি, ১২৫টি টিকেট, ৪টি মোবাইল ফোন এবং ১টি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, গত ১২ এপ্রিল চক্রটি মৌলভীবাজার থেকে এক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকায় কামরুলের বাসায় নিয়ে আসে। সেই বাসায় নারীকে আটক রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তোফায়েল। এই নারী মোবাইল ফোনে র‌্যাবের কাছে সাহায্য চাইলে ১৩ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে রামপুরা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ জানতে পারে যে, রামপুরা এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করছে। সহজ সরল ব্যক্তিরা উক্ত ভুয়া ভিসা ও টিকেট বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, ভিকটিম মো. সাইফুল ইসলাম শান্ত নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ ৫ লাখ টাকা আদায় করে ভিকটিমকে ত্যাগ করে চলে যায়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা ভিকটিমের পিতা মানুষের কাছ থেকে ধার করে জোগাড় করেছিলেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে ভিকটিম তার গ্রামের দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হন। ভিকটিমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তোফায়েল ভিকটিমকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। এ প্রলোভনে ভিকটিম সৌদি আরব যেতে রাজি হয়। সৌদি আরব যেতে হলে আরবী ভাষার ট্রেনিং করতে হবে, এ কথা বলে ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে এসে কামরুলের বাসায় আটক রেখে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে আটক আসামিদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং টিকেট ধরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আসামিরা তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে দেয়। এভাবে গত ২ বছরে আসামিরা আট বার বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে। চক্রটি অবৈধভাবে শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

চক্রের মূলহোতা কামরুল নবম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। প্রতারণা এবং মানবপাচারই তার পেশা। সে ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যায়। তারপর সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাই এর রেসিডেন্স ভিসা লাভ করে এবং একটি প্রাইভেটকার ক্রয় করে নিজে ড্রাইভিং করে অর্থ উপার্জন করে। বিশ্বে করোনার প্রাদূর্ভাব হলে প্রাইভেট কারটি বিক্রি করে ২০২১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে পুনরায় প্রতারণা এবং মানবপাচারকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই তার।