অতীতের মতো আবারো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ধরে রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটে বিশ্বাস করে না। কারণ সাধারণ মানুষকে নির্যাতনকারী এই দলটি মানুষ ভোট দিক তা চায় না।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত শুক্রবারে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন এমন মন্তব্যও করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি যেটা চাচ্ছেন দেখতে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেটা উনি দেখতে পাবেন।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ‘দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই’বলে মন্তব্য করেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা বিষয়টি বিএনপি মহাসচিবের সামনে তুলে ধরলে জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর উত্তর দেওয়ার মতো রুচি আমাদের থাকে না। এগুলো মূল বিষয়গুলোকে এড়িয়ে এসব কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। শক্তিশালী বিরোধী দল আছে বলেই তো এখন পর্যন্ত কথাগুলো আমরা বলছি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পার্লামেন্টে বিরোধী দল নেই তাদের (সরকার) কারণে। তারা দেশে গণতন্ত্রের কোনো স্পেস রাখেনি। গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকলে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে উনি কোন ধরনের শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে চাচ্ছেন আমরা ঠিক সেটা বুঝি না। উনি যেটা চাচ্ছেন দেখতে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেটা উনি দেখতে পাবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বেশিরভাগ সময় মির্জা ফখরুল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, বিচার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ সম্পর্কে যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতনের যেসব অভিযোগ উঠেছে তা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি র্যাব ও বাহিনীটির সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সেই সত্যকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের ফলে মৃত্যু, প্রতিবাদকারী ব্যক্তিদের পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের গ্রেফতার, বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার, বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া ও কারাগারে পাঠানোকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে উল্লেখ করা প্রকৃত সত্যকে উদঘাটন করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৮ এর নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, সন্ত্রাস এবং আগের রাতে সিল মারা, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে আসতে না দিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। প্রতিবেদনে নির্বাচন ব্যবস্থাকে জালিয়াতিপূর্ণ বলে অভিহিত করায় প্রমাণিত হয়েছে যে, অনির্বাচিত আওয়ামী সরকারের অধীনে কখনও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, সংবাদকর্মীদের নির্যাতন এবং নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।
বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন করেও লাভ নেই বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশপ্রেমিক সকলকে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
এসময় ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা অব্যাহত রাখার যে সিদ্ধান্ত দিয়েচে আদালত তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সভা মনে করে, জোবায়দা রহমান একজন অরাজনৈতিক চিকিৎসক। তাঁকে দুদকের এ মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। কোনো ভিত্তি না থাকলেও শুধু জিয়া পরিবারকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে ।
সভায় এ ধরনের হীন অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংবিধানের মূল চরিত্রকে অক্ষুণ্ন রেখে বিচারিক কর্ম সম্পাদনের আহ্বান জানানো হয়।