মামলা সূত্রে পরিচয়, অতপর প্রেম। নিজের ঘরে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। প্রেমিকারও রয়েছে স্বামী আর সন্তান। তারপরও প্রেমে বেপরোয়া এই জুটি। প্রেমিকাকে ডিভোর্স দিতে তার স্বামীকে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দিয়েছেন প্রেমিক। হুমকিদাতা প্রেমিক পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা প্রামানিক (৪৪)। এপিবিএন-১৪, কমান্ড্যান্ট কার্যালয় ঢাকায় কর্মরত তিনি।
পরকিয়া প্রেম ও প্রেমিকার স্বামীকে হুমকির অভিযোগে মাদারীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন কামাল হোসেন সেলিম নামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তিনি মাদারীপুরের সদর উপজেলার কুলপদ্বী গ্রামের মৃত কাছির বেপারীর পুত্র। শুধু এই অভিযোগ নয় তার বিরুদ্ধে রয়েছে এ সংক্রান্ত আরো অভিযোগ। বিভিন্ন ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে প্রতারণার অভিযোগে শাস্তিও হয়েছে তার।
জানা গেছে, শিক্ষক কামাল হোসেন সেলিমের স্ত্রী, চার সন্তানের জননী মোসলেমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এসআই মাসুদ রানা প্রামানিক। নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানের পরিচয় গোপন রেখে ২০১৭ সাল থেকে তিনি এই সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই সময়ে মোসলেমার পিতার বাড়ি রংপুরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে পরিচয় হয় মাসুদ রানার সঙ্গে। তারপর থেকে কারণে অকারণে মোসলেমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেন মাসুদ রানা। ২০২০ সালে এই সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে উঠেন মাসুদ রানা ও মোসলেমা। শেষ পর্যন্ত এই পুলিশ সদস্যের প্রেমে অন্ধ হয়ে কামাল হোসেন সেলিমের ঘর ছেড়েছেন সাইত্রিশ বছর বয়সী এই নারী।
এ বিষয়ে আদালতে দায়েরকৃত মামলায় সেলিম উল্লেখ করেছেন, তার পূর্বেও বিয়ে হয়েছিল মোসলেমার। ওই সংসারের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সেই সংসার টিকেনি। ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর সেলিমের সঙ্গে বিয়ে হয় রংপুরের হারাগাছার মেয়ে মোছলেমার। জন্ম হয় আরো দুই সন্তানের। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই সংসারে অমনোযোগী হয়ে উঠেন মোসলেমা। ব্যস্ত থাকেন ফোনে। কারণে অকারণে স্বামীকে না জানিয়েই বাড়ি ত্যাগ করে চলে যান। কিন্তু পিতার বাড়ির কথা বলে গেলেও বাস্তবে তিনি যান অন্যত্র। বিষয়টি ২০২০ সালে বুঝতে পারেন স্বামী সেলিম। একাধিকবার এ ধরনের ঘটনার পর সন্দেহ হয় সেলিমের। একপর্যায়ে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা প্রামানিকের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। পিতার বাড়িতে যাওয়া কথা বলে তার কাছে যান মোসলেমা। দু’জন একসঙ্গে বসবাস করেন।
এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হলে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পিতার বাড়িতে চলে যান মোসলেমা। সেখানে থেকে অবাধে এসআই মাসুদ রানা প্রামানিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান। এ বিষয়ে বাধা দিলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এবার সামনে আসেন এসআই মাসুদ রানা। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট রাত ১০টা ২৩ মিনিটে এসআই মাসুদ রানা প্রামানিক তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন থেকে সেলিমকে হুমকি-ধমকি দেন।
এ বিষয়ে আদালতে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মাসুদ রানা পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, এখন মোসলেমা আমার জীবনের সঙ্গে জড়িত। আমি তাকে বিয়ে করব। তুই ওর জীবন থেকে সরে যা। নতুবা তোকে গুলি করে মেরে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দেব।’ গত ১এপ্রিল বিকালে মাদারীপুর জেলা সদরের কুলপদ্বি চৌরাস্তার প্রধান সড়কে পেয়ে সেলিমকে হুমকি দেন মোসলেমা। এ সময় তার সঙ্গে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মোসলেমার স্বামী কামাল হোসেন সেলিম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মোসলেমার সঙ্গে এসআই মাসুদ রানার অনৈতিক সম্পর্ক। দুই সন্তানের কারণে আমি বারবার চেষ্টা করেছি এই পথ থেকে ফেরাতে। চেষ্টা করতে গিয়ে হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছি। পুলিশ সদস্যের হুমকির কারণে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান, পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন মোসলেমা। এ বিষয়ে মোসলেমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার আগেও নৈতিক স্খলনের কারণে ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর এসআই মাসুদ রানা প্রামানিকের ইনক্রিমেন্ট স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে আদালতে এফিডেভিট করে বিয়ের নাটক করা। প্রতারণার মাধ্যমে ওই তরুণীকে দীর্ঘদিন স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করে। এসআই মাসুদ রানা প্রামানিক গাইবান্দার সুন্দরগঞ্জের মধ্য ধুমাইটারীর ইব্রাহিম প্রামানিকের পুত্র। রিনা আক্তার নামে তার স্ত্রী রয়েছে।
এসব বিষয়ে এসআই মাসুদ রানার কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।