মারিউপোলে ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে রাশিয়া বলেছে, যারা অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার অর্থ হলো আলোচনার সমাপ্তি টেনে দেওয়া।
এদিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার থেকে মারিউপোলে আরো কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে কিয়েভের মেয়র শহরের নাগরিকদের রাশিয়ার আরো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। একইসঙ্গে যারা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন তাদের ফিরে না আসার অনুরোধ করেছেন।
পশ্চিমা অস্ত্রবাহী বিমান ধ্বংসের দাবি রাশিয়ার
রাশিয়া বলছে, পশ্চিমা অস্ত্রবাহী ইউক্রেনের একটি সামরিক বিমান তারা ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ওডেশা শহরের বাইরে এ ঘটনা ঘটেছে।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে। নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে বিবিসি এটি যাচাই করতে পারেনি।
অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান
মারিউপোলে জীবন রক্ষার সুযোগ হিসেবে ইউক্রেনের সেনাদের আজ রোববারের মধ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।
দেশটি বলেছে, এ সময়ের মধ্যে অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল তাদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এ জন্য তারা কিয়েভের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউক্রেনের সেনাদের।
তারা বলছে, ইউক্রেনের যেসব সৈন্য ও বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধারা মারিউপোলে এখনো লড়াই করছে, তারা স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যারা এটা করবে তাদের বন্দি হিসেবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করবে না তাদের বিষয়ে কী হবে সে সম্পর্কে দেশটি তাদের বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করেনি।
রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনাদের শহরটির একটি ছোট এলাকায় ঘিরে রাখা হয়েছে।
কিয়েভ ও লভিভ শহরে বিস্ফোরণ চলছেই
রাশিয়া ইউক্রেনে বিমান হামলা আরো জোরদার করেছে। কিয়েভের মেয়র আরো হামলার আশঙ্কায় শহরে না ফিরতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভেও বিস্ফোরণ শোনা যাচ্ছে। তবে সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে রাশিয়ার চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে রাশিয়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ কয়েকজন মন্ত্রীর রাশিয়ায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ওপরও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
অন্যদিকে কিয়েভের উত্তরে বুচা শহর থেকে রাশিয়ানরা চলে যাওয়ার পর সেখানকার অধিবাসীরা বাড়িঘর পুনরায় ঠিকঠাক করতে শুরু করেছে।
মারিউপোলে কী হয়েছে
ইউক্রেনের এই বড় বন্দর নগরীটির পতন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছয় সপ্তাহ ধরে সেখানে রাশিয়ার হামলা চলছে এবং এতে মারা গেছে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক। যারা বেঁচে গেছে তারাও কনকনে ঠান্ডায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বোমায় শহরটি তছনছ করে দিয়েছে রুশরা। ফলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পানি ও ঔষধের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ শহরটির আরো উত্তরে সরে গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও স্বীকার করেছেন, শহরটির অল্প অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
আমেরিকাতে সতর্ক করেছে রাশিয়া
রাশিয়া লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ না করলে ‘অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে পাঠানো দুই পাতার রুশ কূটনৈতিক নোটটি মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট দেখেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ অস্ত্র-সরঞ্জাম ইউক্রেনকে দিয়ে ‘সংঘাতে তেল ঢালা হচ্ছে’ যা ‘অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত ৮০ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক সাহায্য দেওয়ার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করার পর রাশিয়া এই হুঁশিয়ারি দিল।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত নতুন সাহায্যের আওতায় আমেরিকা ইউক্রেনকে দূরপাল্লার কামান, উপকূল প্রতিরক্ষার ড্রোন, ভারি সাঁজোয়া যান এবং ট্যাংক ও বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে।
বিবিসি বাংলা