logo
আপডেট : ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১১:০২
অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে গরু, আতঙ্কে খামারিরা
শাকিল মুরাদ, শেরপুর

অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে গরু, আতঙ্কে খামারিরা

একটি গরুর খামার

শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি পূর্বপাড়া ও ভাটিয়াপাড়া গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকটি গরুর খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে ২-১৫টি করে গরু রয়েছে। এসব খামারে প্রতিটি গাভী প্রতিদিন গড়ে ৫-৩০ লিটার দুধ দেয়। এ জন্য এ দুটিকে ‘দুগ্ধগ্রাম’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

গত এক মাসে এ দুই গ্রামে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। একের পর এক গরুর মৃত্যুতে এলাকার খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মারা যাওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা বলে দাবি করছেন খামারিরা।

স্থানীয়রা জানান, গত মার্চ মাসের ১২ থেকে এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদের সাহায্য চেয়েও পাননি একাধিক খামারি।

তিলকান্দি গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় গরু কিনেছিলেন তিনি। গরুটি সামনের কোরবানির ঈদে বিক্রির কথা ভাবছিলেন তিনি। তবে তার সেই আশা শেষ হয়ে গেছে। অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে তার ষাঁড়টি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় সবাই গরু পালন করে। দুধ বিক্রি করে অনেকের সংসারও চলে। আমিও আশা করে একটি ষাঁড় কিনেছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত এক রোগে আমার গরুটি মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে গরুটির হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এরপর শ্বাসকষ্ট ও মুখ দিয়ে লালা ঝড়তো।’

তিলকান্দি গ্রামের আরেক খামারি হাশেম মিয়া বলেন, ‘আমি চারটি গরু নিয়ে খামার শুরু করি। কিন্তু এই কয়েকদিনে আমার খামারের তিনটি গাভীই মারা গেছে। আমি গরিব মানুষ। অনেক স্বপ্ন নিয়ে গরু পালন শুরু করেছিলাম। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

ভাটিয়াপাড়া গ্রামের খামারি মনিরুজ্জামান মনির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কয়েকদিনের ব্যবধানে ২০-৩০টি গরু মারা গেছে। কেউ যদি আমাদের কাছে প্রমাণ চাই তাহলে কবর খুঁড়ে খুঁড়ে তার প্রমাণ দিবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সহযোগিতা পায়নি। গরুর অসুস্থতার কথা জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ফোন দিলে তারা গড়িমসি করে। তারা সকালের কথা বলে বিকেলে আসেন। আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৩-৪ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। তারা যাওয়ার পরপরই গরু মারা যায়। কিন্তু কি কারণে গরুগুলো মারা যাচ্ছে তারা এখন পর্যন্ত সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি।’

সদর উপজেলা কৃষক সমিতির সভাপতি সোলাইমান আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। খামারিদের বিপদে উপজেলা প্রাণিসম্পদের পাশে থাকা দরকার ছিল। তারা সেটি না করে গরু মৃত্যুর পর খামারিদের দিয়েই ময়নাতদন্ত শেষ করে। গরুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে গিয়েই তাদের কর্তব্য শেষ করছে।’

স্থানীয় পশু চিকিৎসক ডা. শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘গরুগুলো দেখে মনে হয়েছে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। প্রায় সব গরুই আক্রান্ত হবার পর হাপাচ্ছিল ও শ্বাসকষ্ট ছিল। সামনে থেকে পেছনে অথবা পেছন থেকে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল। মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। এক পর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং আক্রান্তের দু’-এক দিনের মাথায় মারা গেছে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, ‘আমরা মৃত গরুগুলোর প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছি। পরীক্ষার ফলাফল পেলে গরুগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত কারণে গরুগুলো মারা গেছে।’

টাকা নেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক সময় জরুরি মুহূর্তে গরুর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রয়োজন হয়। তখন হয়তো প্রাণিসম্পদের কেউ ওষুধ কিনে নিয়ে গরুর শরীরে ব্যবহার করেছে। তাই সেই টাকায় তারা খামারিদের কাছ থেকে নিয়েছেন। আপাতত খামারিদের কিছু খাবার বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’