মো. ইউসুফ ভূইয়া (২৫)। ছিলেন বেকার। এক সময় অন্যের সহযোগিতায় ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ‘ইকোনো সার্ভিস’ গাড়িতে হেলপারের চাকরি নেন।
প্রথম দিনের পারিশ্রমিকের ৪০০ টাকা চাইতে গেলে বাধে তর্কাতর্কি। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে হুইল রেঞ্জ দিয়ে সুপারভাইজার লিটনের মাথায় আঘাত করে হত্যা করে পালিয়ে যায় ইউসুফ।
সিআইডি বলছেন, ওই ঘটনায় নিহত রিয়াদ হোসেন লিটনের (৩৭) স্ত্রী হালিমা আক্তার (২৯) অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং- ১৭/১৭১। ওই মামলায় পলাতক নতুন নিয়োগ পাওয়া হেলপার ইউসুফকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে সিআইডি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইউসুফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘গত ৯ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদর থানাধীন ঝুমুর মোড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর ইকোনো সার্ভিসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০১০৩) যাত্রীবাহী বাসের ভেতর থেকে গাড়ির সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।’
তিনি বলেন, ওই ঘটনায় বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখাও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় হেলপার ইউসুফ ভূইয়ার (২৫) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে এলআইসির একটি দল অভিযান পরিচালনা করে শনিবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী থানা এলাকা থেকে ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনা সম্পর্কে মুক্তাধর বলেন, ওবায়দুর নামে প্রতিবেশীর সহযোগিতায় বাসে হেলপারের চাকরি পায় ইউসুফ।
গত ৮ এপ্রিল বিকেল ৩টায় ঢাকার মানিকনগর বাস কাউন্টার থেকে চালক নাহিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও পুরাতন স্টাফ শিপনসহ যাত্রীবাহী বাসে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে রওনা হন ইউসুফ।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি লক্ষ্মীপুর পৌঁছায়। যাত্রীদের গন্তব্যে নামিয়ে লক্ষ্মীপুর সদরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গাড়িটি পার্কিং করা হয়। পুরাতন স্টাফ শিপন দুই দিনের ছুটিতে যাবে।
তার জায়গায় ওই গাড়িতে নতুন দায়িত্ব পান ইউসুফ। তিনি গাড়িটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন।
চালক নাহিদ হোসেন, সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও সহকারী শিপন তাদের প্রাপ্য মজুরি ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। নাহিদ ও শিপন বাড়ির উদ্দেশে চলে যান।
রাত ১টার দিকে নতুন হেলপার ইউসুফ গাড়িতে অবস্থানরত সুপারভাইজার লিটনের কাছে পারিশ্রমিক চান। তখন লিটন জানান, তার ডিউটি এখনো শুরু হয়নি।
ভোর থেকে ডিউটি শুরু হবে এবং লক্ষ্মীপুর-ঢাকা প্রতিটি আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য সে ৪০০ টাকা পাবে। টাকা-পয়সার বিষয়ে কোনো কথা থাকলে গাড়ির চালক নাহিদকে বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ইউসুফ ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত বাসের পুরাতন সহকারী শিপনের সঙ্গে কাজ শিখতে শিখতে লক্ষ্মীপুর গিয়েছেন।
এজন্য তাকেও পারিশ্রমিক দিতে হবে দাবি করে তিনি লিটনের সঙ্গে তর্কে জড়ান। পরে তাদের হাতাহাতি হয়।
একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার লিটনের মাথায় আঘাত করলে গাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। তখন ইউসুফ তাকে গাড়ির সিটের ওপর বসিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।