মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান পিঁপড়ার ডিম। আর এই ডিম সংগ্রহের সঙ্গে সরাসরি জড়িত শেরপুরের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও মুসলিম পরিবার। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
জানা যায়, শেরপুর সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। এই পাহাড়ে প্রচুর গাছ থাকায় পিঁপড়ার বাসা খুব সহজে হয়। বিশেষ করে ঝিনাইগাতী, নালিতবাড়ী ও শ্রীবরর্দী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপার্জনের পথ হিসেবে বেঁছে নিয়েছে পিঁপড়ার ডিম খোঁজাকে।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, তারা প্রতিদিন সকালে ৩-৪ জন করে একটি দল পাহাড় ও জঙ্গলে পিঁপড়ার বাসা এবং ডিম খোঁজার কাজে বেরিয়ে পড়েন। যা চলে বিকেল পর্যন্ত। সংগ্রহ শেষে সন্ধ্যায় তা বিক্রি করেন। সেই টাকা দিয়ে চলছে তাদের সংসার।
তারা আরো জানান, সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর ১-২ কেজি ডিম সংগ্রহ করা যায়। ভাগ্য ভালো ও আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ২-৪ কেজি পর্যন্ত পিঁপড়ার ডিম পাওয়া যায়। সিজন অনুযায়ী সেই ডিম প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করেন তারা।
ডিম সংগ্রহকারী নিরঞ্জন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বের হয়ে একটানা বিকেল পর্যন্ত কাজ করি। এ সময়ে কোনোদিন এক কেজি, কোনোদিন দুই কেজি আবার এমন সময় আছে আধা কেজিরও কম পিঁপড়ার ডিম পাই। এসব ডিম বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়েই সংসারটা চলছে। আমার ইনকামের আর কোনো রাস্তা নেই। তাই এটাই করি। আগে মানুষ কম ছিল, তবে এখন ডিম সংগ্রহেও মানুষ বাড়ছে অনেক।
’
রঞ্জন সাংমা নামের এক ডিম সংগ্রহকারী বলেন, ‘বর্তমানে আমার কোনো কর্ম নাই। আগে একটা দোকানে ছিলাম, সেখান থেকে যে টাকা পাইতাম তা গাড়ি ভাড়া দিতে দিতেই শেষ হয়ে যেত। তারপরও কষ্ট করে ছিলাম। কিন্তু মালিক আমাকে বাদ দিলে আমি বেকার হয়ে পড়ি। তাই বাধ্য হয়েই পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের কাজ করি, আর তা বিক্রি করেই আমার পরিবারে সংসার চলছে।’
রিংকি কোচ বলেন, ‘ডিম সংগ্রহ করি ঠিক আছে, তবে বেচার সময় দাম কম দেয়। যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলানো একটু কষ্ট হয়। যদি প্রশাসন থেকে আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে খুব ভালো হবে।’
ডিমের পাইকাররা জানান, সংগ্রহ করা ডিম কিনে শেরপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন তারা।
ডিমের পাইকার অনয় কোচ বলেন, ‘সারাদিন ডিম সংগ্রহ শেষে আমার কাছে বিক্রি করতে আনে, আমি সেই ডিম কেজি প্রতি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে কিনে নেয়। আবার সেই ডিম আমি বিভিন্ন দোকানে ৮শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করি।’
অঞ্চন ম্রং নামে আরেক পাইকার বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষ ডিম সংগ্রহ শেষে বিকেলে আমার কাছে বিক্রি করতে আনে। সেই ডিম আমি কিনে শেরপুর একটি দোকানে বিক্রি করি। আমার প্রতিদিন ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা লাভ থাকে।’
ডিম ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক বলেন, ‘আমি বাকাকুড়া, রাংটিয়া, গজনী, নকশির কয়েকজনের কাছে পিঁপড়ার ডিম পাইকারি মূল্যে কিনে রাখি। পরে মাছ শিকারি ও শেরপুরের বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করি। অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এ ব্যবসা থেকেও ভালো আয় হয়। আমি প্রতিদিন প্রায় ৫-১০ কেজি ডিম বিক্রি করি।’
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে কিছু কিছু পরিবারে জীবন চলে এটা কিছুদিন আগে শুনেছিলাম। তবে কেউ সহযোগিতার জন্য আসেনি। তারা যদি কেউ প্রশাসনের সহযোগিতা চাই, তাহলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’