শহরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাট করে বহুতল মার্কেট করার উদ্যোগ নিয়েছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। এরই মধ্যে মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল ভরাটে সরকারের কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুকুর ভরাটের উদ্যোগে ক্ষোভ জানিয়েছে পরিবেশকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, পৌরসভার আয় না বাড়ালে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে না বলে জানিয়েছে সরকার। তাই পৌরসভার আয় বাড়াতেই এই উদ্যোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের মাস্টার কোয়ার্টার এলাকায় জমিদার গোস্টবাবুর দালান (বর্তমানে সমবায় ব্যাংক)। তার পূর্বপুরুষের নামে চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত চন্দ্রনাথ পুকুর। একটি দোকান ঘর সরিয়ে পুকুর ভরাট শুরু হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক টুকরি দিয়ে বালু পুকুরে ফেলছেন। তারা জানান, গত চার দিন ধরে পুকুর ভরাটে মাটি ফেলা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক একর আয়তনের চন্দ্রনাথ পুকুর পাড়ের ১৯ জন দোকান মালিককে নিয়ে বৈঠক করেন পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। তিনি পুকুরটি ভরাট করে বহুতল মার্কেটের সিদ্ধান্ত জানান। এরপর থেকে শুরু হয় পুকুর ভরাটের কাজ।
হবিগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক মনসুর উদ্দিন ইকবাল ও মাস্টার কোয়ার্টার এলাকার কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা জানান, এই পুকুরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছোট বোনের পরিবারের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ৬০-এর দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট বোনের স্বামী সাঈদ হোসেন পরিবার নিয়ে চন্দ্রনাথ পুকুর পাড়ে অবস্থিত গোস্টবাবুর দালানে থাকতেন। তিনি ওই সময়ে হবিগঞ্জ মহকুমার একজন ম্যাজিস্ট্র্রেট ছিলেন।
ওই সময়ে চন্দ্রনাথ পুকুরই ছিল মাস্টার কোয়ার্টার, মুসলিম কোয়ার্টার ও হাসপাতাল কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের গোসলের স্থান।
এদিকে পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে গত শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সংগঠনের স্থানীয় নেতাদেরকে নিয়ে পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হবিগঞ্জ একসময় পুকুরের শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাট করে ফেলায় শহরে জলাবদ্ধতা ও ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হবিগঞ্জ পৌরসভা শত বছরের পুরনো চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাটের উদ্যোগ নিন্দনীয়। একই সঙ্গে বেআইনিও। দেশের সব পৌর এলাকার পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাধার পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে আইন ও নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রকল্প নিতে হবে। তাই আমরা অবিলম্বে ভরাট কাজ বন্ধ করে পুকুরটি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবি জানাই।’
মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। পৌর সচিব মো. ফয়েজ আহমেদ মাটি ভরাটের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এর দায়িত্ব কমিশনার শাহ সালাউদ্দিন আহম্মদ টিটুকে দেওয়া হয়েছে। তিনি সব তথ্য দিতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে একাধিকবার মোবাইল করেও কমিশনার টিটুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র গৌতম কুমার রায় বলেন, ‘গত ২/৩ মাস আগে মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে পৌর পরিষদের এক সভায় চন্দ্রনাথ পুকুরটি ভরাট করে বহুতল মার্কেট করার সিদ্ধান্ত হয়।
‘সরকার বলছে, পৌরসভার আয় না বাড়ালে আর্থিক সহযোগিতা করবে না। তাই পৌরসভার আয় বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে’, বলেন তিনি।