logo
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১০:২৫
ঈদযাত্রা: বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল
লঞ্চের অগ্রিম টিকিট ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে
জহির রায়হান, বরিশাল

লঞ্চের অগ্রিম টিকিট ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে

বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত করার জন্য প্রতিবছর বিশেষ সেবা চালু করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এ সেবার আওতায় যাত্রীদের ১০ থেকে ১২ দিন আগে থেকেই কেবিনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।

প্রথমে লঞ্চের বুকিং টিকিট কাউন্টার থেকে স্লিপ সংগ্রহ করতে হয়। এরপর অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে স্লিপ দিয়ে কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।

কিন্তু কেবিনের জন্য অগ্রিম স্লিপ ও টিকিট সংগ্রহে সিন্ডিকেট, কালোবাজারি ও দালাল চক্ররা সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা নামে-বেনামে লঞ্চের বুকিং কাউন্টারে এসে স্লিপ ও টিকিট সংগ্রহ করছে। এতে অগ্রিম স্লিপ ও টিকিট পেতে হয়রানি-বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ লঞ্চযাত্রীরা।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ২২টি বিলাসবহুল এবং বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের ৩৫টি মিলে মোট ৫৭টি লঞ্চ ঈদে যাত্রী পরিবহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোর সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমিভিআইপি, শৌখিন ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে প্রায় দুই হাজারের বেশি কেবিন রয়েছে। ঈদের কাছাকাছি সময়ে লঞ্চের সংখ্যা বাড়তে পারে।

আরো জানা গেছে, ১৭ এপ্রিল থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে বিশেষ সেবা চালু হবে আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে। যাত্রীদের চাপের ওপর ভিত্তি করে ঈদের পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত বিশেষ সেবা চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

লঞ্চের বুকিং কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছ থেকে পাওয়ার আগেই লঞ্চের কাউন্টার থেকে কেবিনের টিকিটের জন্য স্লিপ দেওয়া শুরু করা হয়েছে। গত সাত আটদিন আগে এই কার্যক্রম শুরু হয়। আর কেবিন পেতে লঞ্চের অফিসগুলোতে যোগাযোগ করছে সাধারণ যাত্রীরা।

বরিশাল নদী বন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২টি লঞ্চে দুই হাজারের মতো কেবিন নিয়ে টিকিট কালোবাজারির দুটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে ১৬-১৭ জন যুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। মূলত লঞ্চের অগ্রিম টিকিট এই ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে রয়েছে বলে অভিযোগ।

এসব চক্র লঞ্চের কাউন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নামে-বেনামে কেবিন বুকিং করে রাখছে। যেগুলো ঈদ সার্ভিস শুরু হলে কেবিন প্রতি ক্রেতাদের দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হবে।

এমভি সুরভী লঞ্চের কাউন্টার ইনচার্জ ফারহান ফেরদৌস বলেন, ‘ঈদে যাত্রী পরিবহণে বিশেষ সার্ভিসের আওতায় কেবিনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। এজন্য আমরা যাত্রীর নাম ঠিকানা রেখে স্লিপ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ স্লিপ জমা পড়েছে, সেই পরিমাণ কেবিন দেওয়া অসম্ভব। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে লটারির মাধ্যমে কেবিন বিতরণ করা হবে।’

এমভি সুন্দরবন লঞ্চের বুকিং অফিস ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, ‘টিকিটের কালোবাজারি ঠেকাতে গত ৬ এপ্রিল থেকেই আমরা স্লিপ নেওয়া শুরু করেছি। স্লিপ অনুযায়ী যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে যে আগে আসবে, তাকেই কেবিনের স্লিপ ও টিকিট দেওয়া হবে।’

স্থানীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী খান জসিম জানান, ঈদ ও বিশেষ দিবসে ছুটিতে লঞ্চের কেবিন সিন্ডিকেটরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদেরকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় না আনলে ঈদের সময় বিশেষ সার্ভিসে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে। এই বিশেষ সার্ভিসের সময় যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

‘কেবিন কালোবাজারি ও দালালদের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে টিকিটের কালোবাজারি রুখতে মাঠে কাজ শুরু করবে প্রশাসন’, বলেন তিনি।