১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে তৎকালীন ‘বাংলা’র স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। তার দুইশত চৌদ্দ বছরের মাথায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পলাশী (ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা কৃষ্ণনগরস্থ) থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে (যদিও এখন ভিন্ন ভিন্ন দেশের সীমানায়) দূরের বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশ নামক নবসৃষ্ট সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারের অভিষেক ঘটে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ম্যান্ডেট পেয়েছিল, কিন্তু নবনির্বাচিত সদস্যদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরিবর্তে, পশ্চিম পাকিস্তান সরকার শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর দমন-পীড়ন চালায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত হামলার মাধ্যমে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার সূচনা করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাতে তারা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি ওয়ারলেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ করে বার্তা পাঠান। ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার ও স্বাধীনতার ঘোষণা সবমিলিয়ে বাঙালির মরণপণ মুক্তিযুদ্ধ চরমভাবে বেগবান হয়ে ওঠে।
১৯৭১ এর ২৬ মার্চ শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি পরাশক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম দিকে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না; বিশেষত অস্ত্র-সস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে। এ অবস্থায় সর্বস্তরের বাঙালির মনোবল বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত সহচর তাজউদ্দীনের মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এ সরকার সম্পর্কে দেশবাসী ও বিদেশিদের অবগত করা এবং সরকারের কর্মকা- পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠান প্রয়োজন, যদিও তা যুদ্ধময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অত্যন্ত ঝুঁঁকিময় ছিল। তথাপি শপথ অনুষ্ঠান না করলেই নয়। বেশিরভাগ এলাকা তখন পাকিস্তানিদের দখলে ছিল। এ অবস্থায় ঝুঁঁকিমুক্ত ও কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক স্থান পাওয়া বেশ দুষ্কর ছিল।
শপথ অনুষ্ঠানটি প্রথমে চুয়াডাঙ্গার একটি স্থানে করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পাকিস্তানিদের বিমান হামলার কারণে পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়েছিল। তারপর (পূর্বের কুষ্টিয়া জেলার) বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রবাগানে শপথ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। এই জায়গাটি প্রথমত তখনো পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত ছিল এবং ভারতের সীমান্তবর্তী ছিল। ভারত সরকারের সাথে পূর্বে থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর পরোক্ষ সমর্থনে সেখানে ১৭ এপ্রিল শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করা অপেক্ষাকৃতভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এই স্থানে বিমান হামলা করতে হলে পাকিস্তানি বাহিনীকে ভারতীয় আকাশসীমা অতিক্রম করতে হতো; পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর তা সহজ ছিল না। তথাপি শপথ অনুষ্ঠান খুব দ্রুত সম্পন্ন করতে হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন এই অস্থায়ী সরকারের প্রধান করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি তখন পাকিস্তানের জেলে বন্দি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নবজাত প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। অন্য মন্ত্রীদের মতো তাজউদ্দীন আহমদও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং একটি ছোট দল জাতীয় সংগীত গায়, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...’। অনুষ্ঠানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমেদ বক্তৃতা করেন এবং বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের ওপর সশস্ত্র আগ্রাসন ও গণহত্যা চালানোর কারণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মুখে বহু দশকব্যাপী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বর্ণনা তুলে ধরেন, যা এখন মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ করা হয় মুজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকারও পরিচিত হয় ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে। তাঁর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর আরও দুই ঘনিষ্ঠ সহচর (ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, ও আ হ ম কামারুজ্জামান), এই ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শুরুতে মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর বৈদ্যনাথতলা বা মুজিবনগর থাকলেও পরবর্তীকালে এর সদর দপ্তর কলকাতা স্থানান্তরিত হয়। কারণ শপথ গ্রহণের মাত্র দুই ঘণ্টা পর মুজিবনগরে পাকিস্তানি বাহিনী বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে এবং মেহেরপুর দখল করে নেয়। তাছাড়া সে সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আর কোনো স্থান সরকারের সদর দপ্তর হিসেবে নিরাপদ ছিল না। সদর দপ্তর বাংলাদেশের সীমানার বাইরে তথা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়ায় মুজিবনগর সরকার ‘প্রবাসী সরকার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে ভারত সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় কলকাতা থেকে এই সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সুবিধা হয়। এই রকম প্রবাসী সরকারের স্বাধীনতাকামী আরও অনেক দেশ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে; যেমন, স্বাধীনতাকামী পোল্যান্ডের প্রবাসী সরকারের সদর দপ্তর স্থাপিত হয়েছিল লন্ডনে; কম্বোডিয়ার সদর দপ্তর ছিল বেইজিংয়ে; আফগানিস্তানের মোজাহিদিন সরকারের সদর দপ্তর ছিল পাকিস্তানের পেশোয়ারে।
গঠনের পর মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করা হয়, যেখানে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ এখন যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সুরক্ষিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। পাকিস্তান সরকার যখন বাংলাদেশে গণহত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মরিয়া, তখন বাংলাদেশের শান্তিকামী জনগণ কোন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ অবলম্বন করেছে বিশ্বকে তা অবহিত করতে হবে। ...বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামে আমরা সবার ছোট-বড় সব শক্তির বন্ধুত্ব চাই। আমাদের জাতিসত্তার সংগ্রামে স্বীকৃতি ও সহায়তার জন্য আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করছি। প্রতিদিনের বিলম্বে হাজার প্রাণ ঝরে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে। মানবতার জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন এবং আমাদের অবিরাম বন্ধুত্ব অর্জন করুন।’
দেশি-বিদেশি ১২৭ জন সাংবাদিক ও কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ করা হয়েছিল শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। গোপনীয়তার কারণে লোকজনকে একত্র করা হয়নি কিন্তু তারপরও প্রচুর মানুষ সমবেত হয়েছিল সেদিন। আশপাশের গ্রামের শত শত লোক অনুষ্ঠানস্থলে জড় হয়েছিল; তবে তারা নিশ্চিত ছিল না কী হতে যাচ্ছে। উৎসুক জনতা পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আম গাছের ডালেও উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর চার সিপাহসালারের অধীনে সাতটি মন্ত্রণালয় নিয়ে সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। উক্ত শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা জারি করা হয়, যা স্বাধীনতার ঘোষণা (proclamation of independence) নামে পরিচিত। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হলেও প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে আয়োজকগণ যথেষ্ট সজাগ ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের উপস্থিতির কারণে দ্রুত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুজিবনগর সরকারের উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী প্রচার পায়। প্রধানত নিরাপত্তা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানের সুবিধার্থে সরকারের প্রধান কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়।
পৃথিবীতে অনেক প্রবাসী সরকারের কথা জানা গেলেও, মুজিবনগর সরকার অপরাপর সরকারগুলোর তুলনায় অতুলনীয় ছিল। এই সরকার দেশের স্বাধীনতাকামী বাঙালির ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে; অল্পসময়ের মধ্যে তারা বিদেশি সরকারগুলোর সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়েও সক্ষম হয়। স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে সংবাদ, বক্তৃতা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি সম্প্রচার করে দেশের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করা, অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য যোগান সরবরাহ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়রত এক কোটি বাঙালি শরণার্থীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা প্রচার করা ও সমর্থন আদায় করা ছিল এই সরকারের মূল দায়িত্ব।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের নেতারা এদেশের মানুষকে দিকনির্দেশনা দিতেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী রেডিওতে তাদের বক্তৃতার মাধ্যমে সারা দেশকে উদ্বুদ্ধ করে রাখতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বারংবার বেতারে তাঁদের বক্তৃতা প্রচার করা হতো। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের অন্যতম কথা ছিল: ‘আমরা তিতুমীর ও সূর্যসেনের বংশধর। এই বিদেশি শত্রুকে দেশ থেকে চিরতরে দূর করার ক্ষমতা আমাদের আছে, যেমন আমরা জীবন উৎসর্গ করতে পারি। স্বাধীনতার জন্য। ’ তাঁদের বক্তৃতা বাঙালিদের মাঝে যেমনি আশার সঞ্চার করত, তেমনি বৈশ্বিক সমর্থন পেতে তাঁর প্রচেষ্টা বেগবান হয় সরকার গঠনের ফলে।
যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে, বেসামরিক প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা, পরবর্তীদের জন্য অস্ত্র সুরক্ষিত করা এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তীব্র কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করা কঠিন ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা প্রবাসী সরকারের কর্মতৎপরতায় সহজতর হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সমর্থন পাওয়ার জন্য সরকার অনেক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তারা ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে এবং জনমত গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘ, ইউরোপীয় দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং অন্যান্য শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। অর্থাৎ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর তথা প্রবাসী সরকার অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে প্রেরণা, শক্তি ও সমর্থন জুগিয়েছে।
অত্যন্ত সফলতার সাথে এই মুজিবনগর সরকার গঠন ও গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সেদিন ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, জাতীয় চার নেতা, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, কর্নেল ওসমানী, আবদুর রব, তৌফিক-ই-এলাহী প্রমুখসহ বাঙালি জওয়ান (পুলিশ, রাইফেল), মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ বাঙালি সমর্থক, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ভারত সরকার ও বিএসএফসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাসীন। বাংলাদেশের আজকের এই সম্মানজনক অবস্থানের কৃতিত্ব মুজিবনগর সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিজয়ের পথ প্রশস্তকরণে মুজিবনগর সরকারের অবদান সত্যিই অপরিমেয়, কারণ অপ্রতিরোধ্য প্রতিকূলতার মধ্যে আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কূটনৈতিক মিশন স্থাপনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন ও স্বীকৃতি আদায় করা এবং প্রকা- শক্তিশালী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলা সত্যিই বিশাল অর্জন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণায় বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। জাতির জনকের ভাবাদর্শগুলো আজও তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সংগ্রাম এখনো অব্যাহত। এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের মাঝেই মূলত ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের স্বার্থকতা নিহিত।
লেখক: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়