পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ প্রদানের হার বেড়েছে। যে কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার সন্তোষজনক লভ্যাংশ ঘোষণা করছে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো। কিন্তু তারপর বিনিয়োগকারী টানতে ব্যর্থ হচ্ছে এ খাত। ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করলে যেখানে শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা সেখানে এসব কোম্পানির শেয়ারদর উল্টে কমছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০২১ সালের সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ১৬টি শেয়ারহোল্ডারের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১০টিই ২০২০ সালের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, যমুনা, ইস্টার্ণ ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা, এন আরবিসি ব্যাংক এবং ইবিএল। এসব ব্যাংক নগদ ও বোনাস মিলে সর্বনিম্ন্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
তথ্য মতে, ব্যাংক এশিয়া তার শেয়ারহোল্ডারদের ২০২১ হিসাব বছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা ২০২০ হিসাব বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের তুলনায় আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে এ বছর সাড়ে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যার সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ। একইভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ নগদসহ মোট সাড়ে ২২ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ হারে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শাহ্জালাল ইসলামী এবং উত্তরা ব্যাংক। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক তার শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাসসহ মোট ১৫ শতাংশ এবং উত্তরা ব্যাংক ১৪ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।
গত বছরের হারে এ বছর লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ব্র্যাক, আইএফআইসি, যমুনা এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এর মধ্যে ব্র্যাক সাড়ে ৭ শতাংশ নগদের পাশাপাশি সাড়ে ৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেবে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আইএফআইসি ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আর যমুনা ব্যাংক দেবে সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ।
এদিকে ডাচ্-বাংলা সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সঙ্গে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেবে, যা গত বছরের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম। ইবিএল পর্ষদ সভায় ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ এবং সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর ২০২০ সালে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। বরাবরের মতো লোকসানি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে বাজারে নতুন তালিকাভুক্ত ব্যাংক এনআরবিসি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালের মহাধসের পর শেয়ারবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর প্রধান কারণ ব্যাংক খাতের দুরবস্থা। একের পর এক ব্যাংকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত বোনাস শেয়ার যোগ হয়েছে। ফলে শেয়ার সংখ্যা বেড়েছে। যার জের ধরে কমে গেছে ব্যাংক শেয়ারের দর।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী ভোরের আকাশকে বলেন, মূলত বোনাস শেয়ার যোগ হওয়ার কারণে ব্যাংক শেয়ারের চাহিদা কমে গেছে। ২০১০ সালের আগেও ব্যাংক কোম্পানি প্রচুর বোনাস শেয়ার প্রদান করত। ২০১০ এর পরেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। যে কারণে দিন দিন ব্যাংক শেয়ারের দর কমেছে। তবে এখন এসব শেয়ারের দর অনেক কম। এখান থেকে দেখে শুনে বিনিয়োগ করতে পারলে বিনিয়োগকারী ভালো ফল আশা করতে পারেন।
জানা যায় লভ্যাংশ ঘোষণাকারী ও মুনাফায় থাকা ব্যাংকগুলো ২০২১ সালে ৪ হাজার ৮৩ কোটি টাকারও বেশি নিট মুনাফা করেছে। ২০২০ সালে এ ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ছিল ২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত বছর নিট মুনাফা বেড়েছে ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা ৪৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ইপিএস আড়াই গুণে উন্নীত হয়েছে। লভ্যাংশ না বাড়ালেও আইএফআইসির ইপিএস ৬৭ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৯ পয়সা হয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ইপিএস ১ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৪৬ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইপিএস ১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা। একইভাবে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।