logo
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ১০:২৯
১৮ বছর ধরে শিকলে বাঁধা চায়নার জীবন
সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম

১৮ বছর ধরে শিকলে বাঁধা চায়নার জীবন

শিকলে বাঁধা রয়েছে চায়নার পা

ছোট্ট একটি টিনের চালাঘর। তার ভেতরে খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে পা বাঁধা। শিকলের আঘাতে পায়ে সৃষ্টি হয়েছে একাধিক ক্ষত। ঝড় থেকে বৃষ্টি কিংবা শীত থেকে গ্রীষ্ম, চালাঘরের এই মেঝেতে সারাদিন শিকলে বাঁধা অবস্থায় বন্দি জীবন কাটছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের মানসিক ভারসাম্যহীন চায়না বেগমের (৩৪)।

বিধবা মা এবং দিনমজুর ভাই সাইফুলের সংসারে বোঝা হয়ে আছেন চায়না। অভাবের তাড়নায় চায়নার ভালো কোনো চিকিৎসা দিতে পাচ্ছে না পরিবারটি। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এভাবেই শিকলবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সন্তানের জননী চায়না বেগম। যার কপালে দীর্ঘ ১৮ বছরেও মেলেনি সরকারি কোনো সহায়তা কিংবা ভাতার কার্ড।

গত রোববার রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাউনিয়ারচর গড়াইমারী গ্রামে চায়নার বাড়িতে গিয়ে এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায়।

চায়নার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রায় ২২ বছর আগে একই এলাকার কাচানীপাড়া গ্রামের আবেদ আলীর সঙ্গে চায়নার বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে ৩ বছরের মধ্যেই কিশোরী বয়সে দুটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন চায়না। প্রথম সন্তান জন্মের পর থেকেই চায়নার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। মাঝে মধ্যে স্বামীর বাড়ি থেকে এদিক-সেদিক পালিয়ে বেড়াতেন তিনি।

মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থাতেই দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এরপর দুই মেয়েসহ চায়নাকে বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেন স্বামী আবেদ আলী। বর্তমানেও মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন চায়না। এ কারণেই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।

চায়নার বৃদ্ধ মা সাহাতন খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সব শেষ হইয়া গেছে। টেহা পয়সা খরচ কইরা আর কুলাইতে পারছি না। সরকার যদি দয়া কইরা আমার বেটিটারে ভালো ডাক্তার দেহায়, তাইলে আমার বেটি ভালো হইব। মরণের আগে এইডা দেইহা যাইতে পারলে আমার শান্তি।'

চায়নার প্রতিবেশী জোসনা বেগম বলেন, ‘চায়নার মায়ের বয়স হয়েছে। এখন মেয়ের ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারে না। সংসারটি অভাবের মধ্য দিয়ে চলছে।’

রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াস বলেন, ‘আমি মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। এই ব্যাপারে জানতাম না। তবে চায়নার পরিবার থেকে কেউ যোগাযোগ করলে অবশ্যই যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসান সাদিক মাহমুদ বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। বিষয়টি আমি কয়েকদিন আগে জেনেছি এবং প্রতিবন্ধীর নতুন তালিকায় চায়না বেগমের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। চায়নার চিকিৎসাপত্র আনতে বলেছি। কাগজপত্র হাতে পেলে অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।’