logo
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ১২:৪৪
ফুটপাত বাণিজ্য
অর্থায়ন একজনের, ব্যবসায় আরেকজন
* দিনে বেতন ৫০০ টাকা * জমেনি ফুটপাতের ঈদ বাজার * অফিস পাড়ার মানুষ এখন মার্কেটমুখী
ইফ্ফাত শরীফ

অর্থায়ন একজনের, ব্যবসায় আরেকজন

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে দোকান। ছবি- ভোরের আকাশ

মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে দৃশ্যমান যে সব ভাসমান কাপড় ব্যবসায়ি আছেন প্রকৃত অর্থে তারা দোকানের মালিক নন। এগুলোর মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ভোরের আকাশের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে বা বছরের অন্যান্য সময় বড় বড় ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালীরা মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে দোকান বসান। এসব দোকানের যে বিক্রেতা আছে এদেরকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচশ টাকা মজুরির বিনিময়ে তারা ফুটপাতে বা ভাসমান অবস্থায় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন।

এদের কেউ এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে, কেউ এসেছেন বরিশাল, নোয়াখালী, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। এসব বিক্রেতার তথ্য মতে, ঈদ উপলক্ষে তাদের আলাদা করে কোনো বেচা কেনা নেই। কিন্তু করোনা প্রভাব কমে যাওয়ায় ব্যবসা আগের চেয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন দৈনিক বাংলা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার ফুটপাতের দোকানিরা।

গতকাল সরেজমিনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মতিঝিলে যে সব কর্মজীবী লোকজন কেনাকাটা করে ঈদ উপলক্ষে তাদের বেশির ভাগই আর ফুটপাত মুখী নয়। উৎসব কেন্দ্রিক তাদের নজর বড় বড় শপিং মলের দিকে। নামি দামি ব্রান্ডের কাপড় পড়ার মানসিকতা থেকেই ঈদে অন্তত অফিস পাড়ার লোকজন ফুটপাতে আসছেন না। অথচ সারা বছর কমবেশি ফুটপাতের ক্রেতাই অফিস পাড়ার চাকুরেরা।

রমজান মাস শেষে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের এখনো বাকি প্রায় বেশ কিছু দিন। তবে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদ বাজারের বিক্রিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, বিক্রি বাড়ছে তাদের। যদিও রাজধানীর মতিঝিলের ফুটপাতের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সে তুলনায় এখানে ততটা জমজমাট নয়।

মো. জামাল মতিঝিলের ফুটপাতে লট পাঞ্জাবির বিক্রেতা। যে কোনো পাঞ্জাবি ৫৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন। দীর্ঘ ৮ বছর যাবত মতিঝিলের ১৬ তলা টয়োটা বিল্ডিংয়ের নিচে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন তিনি। দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে এখানে দোকান চালান এই ব্যবসায়ী।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় তার মালিকের এ রকম আরো ১২টা দোকান আছে। এবার ঈদ উপলক্ষে মালিক ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ’এইবার পুরা ধরা। কাস্টমার নাই। কাস্টমার থাকলে বিক্রি হবে। মেট্রোরেলের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় এখানে লোক কম আসে তাই বেচাকেনা নাই।’

অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম মতিঝিলের ফুটপাত থেকে নিজের জন্য পেন্টের কাপড় কিনেছেন ৩০০ টাকা দিয়ে। কেন ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, এখানে কম দামে মোটামুটি ভাল পণ্য পাওয়া যায়। যেই পেন্টের পিস এখানে ৩০০ টাকায় কিনেছি সেটা বড় মার্কেটে গেলে অন্তত সাতশ থেকে আটশ টাকা লাগত। তাই এখানে অনেকটা সাশ্রয় হচ্ছে আমার।’

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিটা পণ্য এখন তাদের ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রির সময় তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে ঈদ উপলক্ষে যেখানে দিনে বিক্রি হত দশ থেকে পনের হাজার টাকা এখন সেখানে গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হকাররা।

মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায় জামালের মতো আরেক বিক্রেতা আবদুর রহিম ফুটপাতে ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করেন। ৮ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘মতিঝিলে আগের মতো লোকও নাই। আগে যে রকম ব্যবসা ছিল এখন সেই ব্যবসা নেই। সারা বছর যারা ফুটপাত থেকে জামা কাপড় কিনে তাদের ঈদ আসলে ফুট থেকে না কিনে মার্কেট থেকে ভাল কাপড় কেনার ইচ্ছা বেশি থাকে। তাই আমাদের ঈদ উপলক্ষে তেমন বেচা কেনা নাই। শীতের সময় আবার বেচাকেনা হয়। তবে করোনার আগে ফুটে দোকান দিলে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। আর এখন প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দিতে হয়। এইটা দিতে একটু কষ্ট হয়। তবে বেচাকেনা থাকলে দিতে এতটা কষ্ট লাগত না।’

ফুটপাতে বেল্টের দোকানি মো. জাহিদ ঈদ উপলক্ষে তার দোকানে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ১৪ বছর যাবত মতিঝিলের ৩২ তলা সিটি সেন্টার বিল্ডিং এর বিপরীতে ব্যবসা করছেন। তার এখানে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আর্টিফিসিয়াল লেদারের বেল্ট পাওয়া যায়। বেচা বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় বেশির ভাগ অফিসের লোকজন ফুটপাত থেকে না কিনে বড় বড় মার্কেট থেকে কিনেন। তাই ঈদে আমাদের বেচা কেনা নাই। মতিঝিলে সব ফুটের দোকানিরা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমরা না পারি ছাড়তে না ভাল করে ব্যবসা করতে। নিজের চোখে দেখা অনেক ব্যবসায়ি করোনায় টিকতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে পেটের দায়ে আমরা এখনো আছি।