উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার মেদির হাওর, আকাশি হাওর ও ধলিয়া বিলের অধিকাংশ জমির আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাই অনেক কৃষকরাই পানিতে ডুব দিয়ে ধান কাটছেন।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অবশিষ্ট ধানি জমিগুলো তলিয়ে যাবে। এতে করে কৃষকদের শেষ অবলম্বন বলে আর কিছুই থাকবে না।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের একমাত্র ফসল হারানোর মুহূর্তে কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে পাশে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে আছেন তারা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার ভাটি অঞ্চল মেঘনা, ভলভদ্র, লঙ্গর নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে গত দুই দিনে নাসিরনগর হাওর অঞ্চলের আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে মেদির হাওর, আকাশি হাওর, ধইল্যা বিল, তিতাজুরি বিল, আটাউরি বিল, খাসারচর বিলের সব ধানি জমি তলিয়ে গেছে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সোনালি ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
কেউ কেউ শেষ চেষ্টা হিসেবে পানির নিচ থেকে আধাপাকা ধান কেটে আনার চেষ্টা করছেন। অনেক কৃষককে আবার পানিতে ডুব দিয়ে ধান কাটতে দেখা গেছে।
নাসিরনগর টেকানগর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমার ৫০ কানি (৩০ শতাংশে এককানি) জমির ধান পানির নিচে। ধান রক্ষায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
মাছমা গ্রামের লাভলু মিয়া বলেন, ‘পানিতে ডুব দিয়ে ধান কাটছি। ধান পচে যাচ্ছে। সরকারের কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ নেয়নি।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ধান আল্লায় নিয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের কেউ যদি আইয়া একটু খোঁজ নিত, আমাদের কোনো দুঃখ থাকত না। তারা আমাদের তালিকা করব তো দূরের কথা, কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেইনি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ তারেক বলেন, ‘জেলায় ১৭০ হেক্টরের ওপরে জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। হাওর অঞ্চলে দুই হাজার ৫০০ কৃষকের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।’
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান শাওন জানান, ঊজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দ্রুত হাওরের ধান কেটে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত আড়াই হাজার কৃষক।