logo
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:৩৯
দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় বঞ্চনা কমেনি
* ১০ বছরে এনজিও অনুদান এনেছে ৫৮১৮৫ কোটি টাকা * এনজিও কমলেও বাড়ছে সহায়তা
জাফর আহমদ

দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় বঞ্চনা কমেনি

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অফিস। ফাইল ছবি

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে দেশে আসা বৈদেশিক অনুদান বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ১০ বছরে এসব এনজিওর মাধ্যমে দেশে এসেছে ৫৮ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। ১ লাখ ২২ হাজার ৩৩৯টি প্রকল্পের বিপরীতে বিদেশি দাতারা এ অনুদান দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে এ টাকা দেশে এসেছে। এ সময়ে বিদেশি দাতারা ৬২ হাজার ১৫৫ কোটি ১৫ লাখ ১৭ টাকা অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৪৪টি দেশীয় এবং ৬৩টি বিদেশি এনজিওর মাধ্যমেই বিদেশি টাকা এসেছে ৭ হাজার ৮৫০ কোটি ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৯১৪ টাকা। ১ হাজার ৬৫৫টি প্রকল্পের বিপরীতে এ টাকা এসেছে। একই বছরে বিদেশি দাতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ৭ হাজার ৫৫৯ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭২ টাকা। একক বছরে হিসাবে ১০ বছর আগে বিদেশি অনুদানের প্রতিশ্রুতি, আনুদানের পরিমাণ এবং প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসা টাকার পরিমাণ বেড়েছে। যদিও এনজিওর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু আগের সংখ্যায় কম এনজিওর মাধ্যমে টাকার পরিমাণ বেড়েছে।

এনজিও ব্যুরোর তথ্য দেখে যায়, চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এনজিওর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৬টি। এর বাইরে ৭২৪টি এনজিও বাতিল হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে এসব এনজিও বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে বিদেশি অনুদান বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ হাজার ১৭২টি প্রকল্পের বিপরীতে বিদেশি দাতারা ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; এ সময়ে অনুদান এসেছিল ৩ হাজার ৬১২ কোটি ২৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ১০ বছর পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৫৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ৭ হাজার ৫৫৯ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; একই বছরে অনুদান এসেছিল ৭ হাজার ৮৫০ কোটি ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৯১৪ টাকা। ১০ বছরে প্রকল্প, প্রতিশ্রুতি ও অনুদান দুই বেড়েছে। এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশার মতো এনজিও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব এনজিও বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এনজিও ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে অ্যাকশন এইডের ১১টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা; আল্লামা আবুল খায়ের ফাউন্ডেশনের ৫৪টি প্রকল্পের বিপরীতে এসেছে ১০৪ কোটি ৮৬ লাখ ৪৭ টাকা; ব্র্যাকের ১২৭টি প্রকল্পের অধীনে ২০১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; কেয়ার ব্যাংলাদেশের ৩০টি প্রকল্পের বিপরীতে দেশে অনুদান এসেছে ২২৮ কোটি টাকা; ফ্রেন্ডশিপের ৫২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৭৯ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা; সেভ দ্য চিলড্রেনের ৩৮ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩২ কোটি ৫২ লাখ ১৪ হাজার টাকা এবং এসকেএসের ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৮৬ লাখ ৩৬ হাজার অনুদান এসেছে।

দেশে এখনো এমন এলাকা আছে যেখানে দারিদ্র্যপিড়ীত, শিক্ষাবঞ্চিত, স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত এবং সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ইম্প্যাক্ট সমানভাবে প্রতিফলিত হয় না। উপকূলীয় এলাকা, চর ও নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকা ও দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় বঞ্চনা এখনো উল্লেখযোগ্য হারে বিদ্যমান। এসব এলাকায় এনজিও কার্যক্রম বেড়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অনুদান আসছে।

এসব কারণে এনজিওর কার্যক্রম বেড়েছে এবং এনজিওর মাধ্যমে অনুদান বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তবে দারিদ্র্যবিমোচন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে এনজিওগুলো ভালো কাজ করছে। আবার এনজিওর নামে তহবিল যে আসছে না, এমন নয়। আর এসব কারণেই সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে।