দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফলের কদর ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানীবাসীর কাছে এসব ফলের কদর বেশি। শহুরে মানুষেরা প্রতিদিনই তাদের খাদ্যতালিকায় রাখছেন এসব ফল। যে কারণে ঢাকা শহরে হাত বাড়ালেই মিলছে বিদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন স্বাদের মুখরোচক ফল। দেশীয় নানা ফলের ভিড়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই ফলগুলো। দামে একটু বেশি হলেও নতুনত্বের ছোঁয়া থাকায় ক্রেতারাও কিনছেন অনায়াসে।
ঢাকা শহরের প্রায় সব ফলের দোকানেই বিদেশি ফলের দেখা মেলে। তবে মতিঝিলি, পল্টন এলাকায় অহরহ দেখা মেলে এসব অতিথি ফলের। পল্টনের ফুটপাত ধরে বায়তুল মোকাররমের দিকে হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে বৈচিত্র্যময় রং আর রূপের পসরা সাজিয়ে রাখা কিছু ফলের দোকান। কাছে যেতেই দেখা মেলে দেশি মৌসুমি ফলের পাশাপাশি রয়েছে ভিনদেশি নানা ধরনের ফল।
ভিনদেশি এসব ফলের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান আম, থাইল্যান্ডের আম, থাইল্যান্ডের হিমসাগর আম, থাইল্যান্ডের আলু-বোখরা, থাইল্যান্ডের লিচু, থাইল্যান্ডের আপেল, নিউজিল্যন্ডের কিউফল, থাইল্যান্ডের রাম্বুরা, মিশরের মাল্টা, দক্ষিণ আফ্রিকার পিয়ার ফল, থাইল্যান্ডের কাঠ লিচু, অস্ট্রেলিয়ার নাট ফল, থাইল্যন্ডের ড্রাগন ও থাইল্যান্ডের রাম্বুটান। আমদানি করা ফলের মধ্যে রয়েছে আরো রয়েছে কমলা, ডালিম, খেজুর, ম্যান্ডারিন, কিন্নো, বিভিন্ন জাতের আপেল, আঙ্গুর, কমলা, নাশপাতিসহ নানা ধরনের বাহারি ফল।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ফল দোকানি জুয়েল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, শহুরে মানুষের কাছে দিন দিন বিদেশি ফলের কদর বাড়ছে। দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতার অভাব হয় না বলে জানান তিনি। এসব ফলের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান আম ৯০০, থাইল্যান্ডের আম ৭৫০, থাইল্যান্ডের হিমসাগর আম ৭০০, থাইল্যান্ডের আলু-বোখরা ১০০০, থাইল্যান্ডের আপেল, নিউজিল্যান্ডের কিউফল ১০০০, মিশরের মাল্টা ৩০০, দক্ষিণ আফ্রিকার পিয়ার ফল ৩০০, থাইল্যান্ডের কাঠ লিচু ৬৫০, অস্ট্রেলিয়ার নাট ফল, থাইল্যান্ডের ড্রাগন ৫০০-৬০০, থাইল্যান্ডের রাম্বুটান ১২০০, মির্জাপুরের বেল ৬০০ থেকে ৭০০ প্রতি পিস।
প্রতিদিন কী পরিমাণ ফল কেনাবেচা করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মাল তিনি একসঙ্গে কিনে আনেন, যা দিয়ে তিনি ৩-৪ দিন দোকান করতে পারেন। প্রতিদিন তিনি গড়ে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করে থাকেন। তিনি জানান, উত্তরায় কয়েকটি এজেন্সি বিদেশ থেকে এসব ফল আমদানি করে। তাদের থেকেই ফল কিনে আনেন।
অপর এক দোকানি রিপন জানান, থাইল্যান্ডের ৫ প্রকার আম তিনি বিক্রি করেনÑ যা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে, থাইল্যান্ডের ড্রাগন ৫০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ার ড্রাগন ৫০০ টাকা, কাঠলিচু ৬০০ টাকা, কমলা ২০০ টাকা, রাম্বুটান ৮০০ টাকা, লাল ড্রাগন ৫৫০ টাকা, কিউই ৭০০ টাকা, মিশরের উন্নত মানের আম্বার খেজুর ১ হাজার টাকা, দুবাই, ইরানি, সৌদি, খেজুর মানভেদে সর্বনিম্ন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন। বিক্রির জন্য একবারে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মাল কিনতে হয় একবারে। তিনি প্রতিদিনের বিক্রি ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ফল বিক্রি করে থাকেন।
ফল কিনছিলেন ব্যাংকার নিজাম উদ্দিন তিনি বলেন, বিদেশি ফল কেনার সাধ্য আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের নেই। রমজানের কারণে দাম বেড়ে গেছে সব ফলের। ৫০০-৬০০ টাকার নিচে কোনো ভালো খেজুর নেই। ডালিম এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৩০-২৪০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এ রকম সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। রমজান আসছে অনেকে ইফতারের জন্য খেজুর কিনবেন এ সুযোগে দাম বাড়িয়েছে। কোনো মনিটরিং নেই। যার যখন ইচ্ছা তখন দাম বাড়াচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পকেট কাটছে ক্রেতাদের।
পুষ্টি ও খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। বাহির থেকে ফল আমদানি করার ফলে দেশের মানুষ দৈনিক ৭৬ গ্রাম ফল খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আগে এর পরিমাণ ছিল ৫৫ গ্রাম। মানুষের চাহিদার কারণে একদিকে দেশে ফল উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ফল আমদানি।
মৌসুমি ফলের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিদেশি ফলের চাহিদা পূরণের জন্য বিশ্বের ৪৬টি দেশ থেকে ২৫ থেকে ৩০ জাতের বিদেশি ফল আমদানি হয়। এই জাতীয় ফলগুলো প্রধানত চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ভুটান, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়।