logo
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:১৭
পাবজি নিষিদ্ধই থাকছে বাংলাদেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক

পাবজি নিষিদ্ধই থাকছে বাংলাদেশে

হাইকোর্ট। ফাইল ছবি

বাংলাদেশে পাবজি গেমস নিষিদ্ধের আদেশই বহাল রেখেছে আদালত। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানের আবেদন খারিজ করে বুধবার (২০ এপ্রিল) হাইকোর্ট এ আদেশ দিয়েছে। এর ফলে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করা গেমসটি নিষিদ্ধই থাকছে বাংলাদেশে।

সকল অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি খেলা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাবজি খেলা পরিচালনাকারী সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান প্রক্সিমা বেটা পিটিই লিমিটেড এ আবেদন করেছিল।

বুধবার (২০ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এই আদেশের ফলে বাংলাদেশে পাবজি নিষিদ্ধই থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।

প্রক্সিমা বেটা পিটিই লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সামির সাত্তার। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। এ সময় বিটিআরসি এবং বিভিন্ন মোবাইল ফোন কম্পানির পক্ষে আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন।

এর আগে, গত বছর ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট এক রিট মামলায় হাইকোর্ট অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারসহ এ ধরণের ক্ষতিকর সকল খেলা এবং খেলার সকল লিংক তিন মাসের জন্য বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। বিটিআরসিকে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়। হাইকোর্ট এ নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করে। এ অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে প্রক্সিমা বেটা পিটিই লিমিটেড হাইকোর্টে আবেদন করে।

শুনানিতে আবেদনকারীর পক্ষে বলা হয়, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাবজি খেলা নিষিদ্ধ হতে পারে না। কারণ পত্রিকার প্রতিবেদনের সাক্ষ্যমূল্য নেই। আর পত্রিকার প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ন আদেশ দিয়েছে। সুতরাং ঢালাওভাবে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

এ সময় আদালত পাবজির পক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনিতো সাংবাদিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। আমরা যদি কোনো প্রতিবেদন বিশ্বাস করতে না পারি তাহলেতো সংবাদ মাধ্যমের মর্যাদাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

পাবজির পক্ষের আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের আদেশের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িকভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই আদেশের কারণে সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী বলেন, পাবজি খেলায় যে লেনদেন হয়, তার কোনো অনুমোদন নেই বাংলাদেশ সরকারের। এভাবে মানি লন্ডারিং হচ্ছে। এক বছরে সাড়ে ৪শ' কোটি টাকা নিয়ে গেছে পাবজি। অথচ এর কোনো ট্যাক্স বা ভ্যাট দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া এই খেলার মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রতিবন্ধি হয়ে পড়ছে।

মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছারের করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ এ ধরণের ক্ষতিকর সকল খেলা এবং এ ধরণের খেলার সকল লিংক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালত অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।

রুলে সকল অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রী ফায়ার গেম ও লাইকীসহ এ ধরণের ক্ষতিকর সকল খেলা ও অ্যাপস অপসারণ এবং সকল লিংক অবিলম্বে বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ওইসব অ্যাপস ও গেইমের মাধ্যমে কি পরিমান অর্থ লেনদেন হয়েছে তা নিরূপনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ওই অর্থ লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ক্ষতিকর গেমস ও অ্যাপস বিষয়ে তদারকি ও গাইডলাইন তৈরি করতে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি), বাংলাদেশ ব্যাংক, সকল মোবাইল অপারেটর, বিকাশ ও নগদকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

রিট আবেদনে ওইসব অ্যাপস ও গেমের আড়ালে শত শত কোটি অর্থ পাচার ও লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি ক্ষতিকর গেমস ও অ্যাপস বন্ধে বিআরটিসিকে নিয়মিত সুপারিশ করতে প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়, পাবজি এবং ফ্রী ফায়ারের মতো গেমস-এ বাংলাদেশের যুব সমাজ এবং শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। দেশের শিশু কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। নারী ও অর্থ পাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি এবং বিগো লাইভ এর মাধ্যমে চলছে। যা দেশের এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিধায় এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করা প্রয়োজন। ক্ষতিকর গেমস এবং অ্যাপস অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উপযোগী সাইবার পদ্ধতি সুনিশ্চিত করতে সরকারের একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।