দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে এ বছর শসার ভালো ফলন হলেও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কিছুদিন আগেও যে শসা ক্ষেত থেকে পাইকারি ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই শসা মাত্র দুই টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে না।
উৎপাদিত শসার দাম হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শত শত কৃষক। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পানির দরে (কম দামে) শসা বিক্রি করছেন। আবার মজুরি খরচ না ওঠায় কেউ কেউ ক্ষেতেই ফসল নষ্ট করছেন। রোজার মাসেও শসার দাম না পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর শসার আবাদ হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয় এখানকার শসা। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় পাইকাররা কৃষকের ক্ষেত থেকেই শসা কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কিন্তু এ বছর ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কথা হয় হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার চাষি মতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, এ বছর এক একর জমিতে শসার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখন যে দাম, তাতে মজুরি খরচই উঠছে না।
একই কথা জানান গোয়ালপাড়া গ্রামের চাষি আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘৫০ কেজি ওজনের একেকটি শসার বস্তায় ১০০ টাকাও মিলছে না। শসার ফলন ভালো হয়েছে ঠিকই; কিন্তু ছয় বস্তা (৩০০ কেজি) বিক্রি করেও এক কেজি গরুর মাংস কেনা সম্ভব হয় না।’
মনির হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, প্রতি বছর রমজান মাসে শসার দাম চড়া থাকলেও এ বছর পুরোই ভিন্ন।
হাড়িভাসা ইউনিয়নের আরেক কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে শসার আবাদ করেছি। প্রথম দিকে ভালো দাম পেয়েছি। ভেবেছিলাম রমজানে আরও দাম পাবো।
‘কিন্তু শসার যে দাম, এগুলো বিক্রি করে লেবার (শ্রমিক) খরচই উঠছে না। তাই বাধ্য হয়ে শসা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছি। এতে খেতেই ফসল নষ্ট হচ্ছে’, বলেন আমির হোসেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিন আগেই আমরা কৃষকের ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি শসা ৪৫ টাকা দরে কিনেছি। সেই শসা এখন দুই টাকা করে কিনতে হচ্ছে।
কারণ জানিয়ে তারা বলেন, তখন মোকামে চাহিদা ছিল বেশি; আর এখন চাহিদাও কম, উৎপাদনও বেশি হচ্ছে। মোকামে দাম বাড়লে কৃষকরাও ভালো দাম পেত।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদেক জানান, গত বছর এ জেলায় ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছিল। এ বছর তা কমে এসেছে ২১০ হেক্টরে। শসার দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় আগামী মৌসুমে চাষের পরিমাণ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।