logo
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২২ ১০:১৩
শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ
সংঘর্ষ-উত্তেজনা এড়িয়ে চলাই কাম্য
নিজস্ব প্রতিবেদক

সংঘর্ষ-উত্তেজনা এড়িয়ে চলাই কাম্য

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

ছাত্রসমাজের হানাহানি-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার অনাকাক্সিক্ষত দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলো দেশবাসী। লম্বা সময় ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ দৃষ্টিগোচর হলো। রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাশের ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্যে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। ত্রিমুখী সংঘর্ষে ছাত্র, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে; ঝরে গেছে তাজা প্রাণ। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার খবর এসেছে। অব্যাহত রয়েছে চিন্তা-উত্তেজনা। দুঃখজনক এ সংঘর্ষের ফলাফলে শিক্ষার্থী ও সাধারণের শারীরিক-মানসিক ক্ষতি হয়েছে, ব্যবসায়ীরা গুনেছেন কোটি টাকার মাশুল।


মিরপুর সড়কের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায়ই কেন এরূপ গণ্ডগোল হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সময়ে সময়ে- এবারের ব্যাপারটা আরো জটিল। ব্যবসায়ীদের দাবি, ছাত্র পরিচয়ে ফাঁও খাওয়া, খেয়ে ইচ্ছেমতো টাকা দেওয়া-না দেওয়া, কাপড়, বই বা অন্য কোনো পণ্য কিনে টাকা কম বা না দেওয়া এবং চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করলেই মারধর, ভাঙচুর, লুটপাট এবং সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে। আবার ছাত্রদের অভিযোগ, হোটেল ও দোকানের মালিক এবং কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে প্রায়ই দুর্ব্যবহার করে। এর প্রতিবাদ করলে তারা মারমুখী হয়ে উঠে। আবার ব্যবসায়ীদের নিজেদের মধ্যকার বিরোধে অনেকে ছাত্রদের জড়িয়ে পক্ষভুক্ত করলে গ-গোল বাঁধে। সবমিলিয়ে মিরপর সড়কের প্রায় ২৫টি মার্কেটের ব্যবসায়ী সব সময় তটস্থ থাকেন ছাত্রদের ভয়ে। শুধু ঢাকা কলেজের এই ঘটনাই নয়, মাঝেমধ্যেই ব্যবসায়ী কিংবা নির্দিষ্ট কিছু কিছু খাতে কর্মরতদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কারণে বা অকারণে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার এহেন দৃশ্য নিতান্তই অনাকাক্সিক্ষত।


করোনার দাপটে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক বিবেচনায় সচল করা হয়েছে স্কুল-কলেজ। এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া সুখের সংবাদ নয়। অন্যদিকে, কোভিডের ধাক্কা সামলে দুই বছর পর এবার ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকালে চলমান টানা সংঘর্ষে ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে যা কোনভাবেই পূরণীয় নয়। মোটকথা, সংঘর্ষ কোনো সময়ই কাম্য নয়। সহিংসতার ফলাফল সর্বদাই ক্ষতির কারণ।


এবারের সংঘর্ষে ১০ তলা ভবনের ছাদের উপর থেকে বোতলে পেট্রোল ভরে নিচে ব্যবসায়ী ও পুলিশের উপর ছুড়ে মারে ছাত্ররা। দুপুরের দিকে নুরজাহান মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছাত্ররা ক্যাম্পাসের ভেতর ও বহুতল ভবনের ছাদ থেকে যে পরিমাণ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে তাতে এত পরিমাণ ইটের জোগান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিকদের মেরে রক্তাত্ত করেছে ব্যবসায়ীরা। ছাত্রদের দিকে অস্ত্র তাক করেছে পুলিশ। সাধারণ পথচারী নিহতের ঘটনা ঘটেছে, আহত হয়েছে অনেকে।


শুধু উল্লিখিত ঘটনাই নয় দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা এর শিক্ষার্থীদেও সংঘর্ষ, হানাহানিতে জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্তিতি সামাল দিতে হবে। উভয়পক্ষকে নমনীয় হতে হবে, উত্তেজনা প্রশমনে আন্তরিক হতে হবে। পরিস্তিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি সব পক্ষরই উচিত হবে নিজেদের স্বার্থে উত্তেজনা-সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা। প্রকৃতপক্ষে এটাই সকলের কাম্য।